মদ্যপান ইসলামী শরী’য়তের দৃষ্টিতে কবীরা গুনাহ্, হারাম এবং ফৌজদারী অপরাধরূপে গণ্য। এজন্য শরী’য়ত অনুযায়ী শাস্তিদান একান্তই কর্তব্য। ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মদ্যপায়ীর শাস্তি হচ্ছে দোররা। যদি কারো মদপান করার বিষয়টি যথানিয়মে প্রমাণিত হয়, তাকে দোররা মারা হবে। মদ এক ফোঁটা পান করলেও এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। এ দোররা সমূহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারা হবে। মাথা ও মুখমণ্ডলে প্রহার করবে না। দোররা মারার সময় লজ্জাস্থান ছাড়া সর্বাঙ্গ বিবস্ত্র করে তা প্রয়োগ করত্রে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

মদপান বিষয়টি মদ্যপায়ীর নিজ স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমাণিত হবে। যদি মাত্র একবার স্বীকারোক্তি প্রদান করে তাতেও প্রমাণিত হবে। অথবা দু’জন পুরুষের সাক্ষ্য দ্বারাও প্রামাণিত হবে। এক্ষেত্রে মহিলাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

কোন ব্যক্তি মদপান করার পর যদি তাকে ধরে আনা হয় এবং তার মুখে মদের গন্ধ বিদ্যমান থাকে অথবা কাউকে যদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধরে আনা হয় এবং সাক্ষীগণ তার মদ পানের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাকে দণ্ড প্রদান করা হবে। এমনিভাবে কেউ যদি মদপান করেছে বলে নিজে স্বীকার করে এবং মুখে মদের গন্ধ বাকি থাকে, তবে তাকেও দণ্ড প্রদান করা হবে। মদ পরিমাণে কম পান করুক বা বেশি পান করুক তাতে কোন পার্থক্য নেই। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

ফকীহগণ বলেন, নেশাগ্রস্ততা চিনার উপায় হলো, যদি কোন শরাবখোর ব্যক্তি আসমান যমীনের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারে, পুরুষ মহিলা চিনতে না পারে এবং কি বলে তা তারতম্য করতে না পারে আর অধিকাংশ সময় অহেতুক প্রলাপ বকে তাকে নেশাগ্রস্ত ও মাতাল মনে করা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) যদি সাক্ষীগণ (বিচারকের) নিকট কোন ব্যক্তির মদপান করার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় তবে বিচারক সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, মদ কি জিনিষ? তারপর জিজ্ঞাসা করবেন, সে কিভাবে তা পান করল? কেননা হতে পারে তাকে জোরপূর্বক মদপান করানো হয়েছে। এরপর জিজ্ঞাসা করবেন, সে কবে মদপান করেছে। কারণ, এটা তো অনেক আগের ঘটনাও হতে পারে। তৎপর জিজ্ঞাসা করবেন, সে কোন স্থানে পান করেছে? কেননা, হতে পারে যে, সে দারুল হরবে তা পান করেছে। যদি সাক্ষীগণ এসব ব্যাপারে যথাযথ ইতিবাচক বিবরণ দিতে পারে তবে বিচারক উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে রাখবেন। অতঃপর সাক্ষীগণের আদালত তথা বিশ্বসযোগ্যতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হতে হবে। বাহ্যিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে কোন ফয়সালা দেওয়া যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

বালিগ, জ্ঞানবান, বাকশক্তি সম্পন্ন কোন মুসলমান মদপান করলে তার ব্যাপারে অভিযোগ ও সাক্ষ্য প্রদান করা যাবে। আর এ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাকে দণ্ড প্রদান করা হবে। পক্ষান্তরে নাবালিগ, পাগল এবং কাফির ব্যক্তির উপর দণ্ড প্রয়োগ করা যাবে না। কোন বোবা ব্যক্তির উপরও দণ্ড প্রয়োগ করা যাবে না। তবে অন্ধ ব্যক্তিকে দত্ত প্রদান করা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

যদি দারুল ইসলামে কোন মুসলমান মদপান করে তারপর সে বলে যে, মদপান হারাম আমি একথা জানতাম না, তবে এ অবস্থায়ও তাকে দোররা মারা হবে। কোন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যাপারে যদি সাক্ষীগণ বলে যে, সে মদপান করেছে তবে হুশ ফিরে না আশা পর্যন্ত তাকে দণ্ড প্রদান করা যাবে না। কারো মুখ থেকে মদের গন্ধ পাওয়া গেলে তাকে দোররা মারা যাবে না। যদি না সাক্ষীগণ তার মদপান করার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় অথবা নিজে স্বীকার করে। যদি দুইজন সাক্ষীর মধ্যে একজন বলে যে, সে মদপান করেছে আর অপরজন বলে যে, সে মদ বমি করেছে তবে তাকে দণ্ড প্রদান

করা যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) যদি দুইজন সাক্ষী কারো মদ পানের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে এবং অভিযুক্ত

ব্যক্তির মুখ থেকে তখন মদের গন্ধও পাওয়া যায়, কিন্তু সময়ের ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় তাহলে তাকে দণ্ড প্রদান করা জায়িয হবে না। এমনিভাবে যদি দুইজন সাক্ষীর একজন বলে যে, সে মদপান করেছে, আর অপরজন বলে যে, সে একথা স্বীকার করেছে তাহলে তাকেও দণ্ড প্রদান করা যাবে না। অনুরূপভাবে যদি একজন সাক্ষী বলে যে, সে মদের নেশায় আচ্ছন্ন আছে আর দ্বিতীয় জন বলে যে, সে অন্য কোন বস্তুর নেশায় আচ্ছন্ন আছে তবে তাকেও দোররা মারা যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) কেউ যদি মদকে পানি, দুধ অথবা অন্য কোন তরল বস্তুর সাথে মিশ্রিত করে তা পান করে তবে এ ক্ষেত্রে মদের পরিমাণ বেশি হলে এক ফোঁটা পানি করলেও তাকে দোররা মারা হবে। আর যদি মদের পরিমাণ কম হয়, তথাপিও তা পান করা হালাল হবে না। তবে নেশাগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত এ জাতীয় পানীয় দ্রব্য পান করলে দণ্ড প্রদান করা যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

কাউকে জোরপূর্বকভাবে মদপান করানো হলে, তাকে দণ্ড প্রদান করা যাবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)

মদপান করার কারণে যাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাকে লা’নত করা বা ভর্ৎসনা করা জায়িয নেই। হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ নামক এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায় মদপানের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তাকে লক্ষ্য করে একদা এক সাহাবী বলেছেন اللهم العنه হে আল্লাহ্। আপনি তার প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, লা’নত করোনা। সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

ولكن قولوا اللهم اغفر له اللهم ارحمه

বরং বল, হে আল্লহ! তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার প্রতি রহম করুন। এতে একথা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, শাস্তিপ্রাপ্ত কোন মদখোর ব্যক্তিকে লা’নত করা জায়িয নেই। এমনকি কোন গুনাহগার ব্যক্তিকে তার গুনাহের কথা উল্লেখ করে লজ্জা দেওয়া শরী’য়তে নিষিদ্ধ। (আল-ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ, ৫ম খণ্ড)