পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন নেশার বস্তু হচ্ছে আফিম। পপি নামক উদ্ভিদের পাতা, কাণ্ড ও ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি হয় এ বেদনানাশক মদক দ্রব্যটি। আফিম মুখে খাওয়া যায় এবং ধুমপানের মাধ্যমেও ব্যবহৃত হয়। এই পদার্থটি পানিতে দ্রবনীয়, তাপের যোগ্য এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করা যায়।
ভাং ও গাজা এক প্রকার পাতা যা দ্বারা নেশা করা হয়। এগুলো তামাকের মত ধুমপানের মাধ্যমে সেবন করা হয়। আফিম থেকেই মারফিন তৈরি করা হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে মারফিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আফিমও মারফিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। বিশুদ্ধ অবস্থায় হিরোইন বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। বিশুদ্ধ অবস্থায় হিরোইন দেখতে স্ফটিক জাতীয় সাদা পাউডারের মত। এর স্বাদ তিতো। এই পাউডার এত বেশি মসৃন যে হাতের আঙ্গুলে ঘসলে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। আফিম ও মারফিনের প্রতিষেধক রূপে হিরোইনের আবিষ্কার হয়। কিন্তু হিরোইনের মধ্যেই এটি ভয়ঙ্কর নেশা জাতীয় বস্তুতে পরিণত হয়। হাশীশ, এক প্রকার উদ্ভিদ। যার থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা হয়। কোন কোন ফকীহ্ বলেন, কানাবে হিন্দী গাছের পাতা থেকে তৈরি মাদক দ্রব্যকে ‘হাশীশ’ বলে।
আল্লামা শামীর মতে, ভাং, হাশীশ, আফিম ইত্যাদি মাদক দ্রব্য হচ্ছে হারাম। এতে মানুষের বিবেক, বিবেচনা শক্তি লোপ পায় এবং এগুলো আল্লাহর স্মরণ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উদাসীন করে রাখে। তবে এগুলো হুকুমের দিক থেকে মদ থেকে নিম্নমানের। কাজেই এ জাতীয় মাদক দ্রব্য পান করলে সামাজিকভাবে সাজা দেওয়া হবে। হদ্দ জারী করা যাবে না। কেউ ভাং ও হাশীশকে হালাল মনে করলে সে হবে ধর্মত্যাগী, যিন্দীক ও বিদ’আতী। এতে দীনী ও দুনিয়াবী উভয় দিক থেকে বহু ক্ষতি বিদ্যমান রয়েছে এমনকি এতে একশত বিশ প্রকারের ক্ষতির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। আল্লামা ইবন তাইমিয়া (র) বলেন, হাশীশকে কেউ হালাল জ্ঞান করলে এটা হবে কুফরী। (শামী, ৬ষ্ঠ খণ্ড)
আল্লামা ইবন তইমিয়া (র) হাশীশ সম্বন্ধে বলেন, তা সেবন করা হারাম। এর দ্বারা আকল বিনষ্ট হয়, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং এ সব বস্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন বানিয়ে দেয়। তার মতে, হাশীশ পান করলে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন, শয়তান খুশি হয়। আখলাক চরিত্র ধ্বংস হয়, মেযাজ খিটখিটে হয়, এমনকি পরিত্রাণে এ জাতীয় মানুষ মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে পাগল হয়ে যেতে পারে। আল্লামা ইব্ কায়্যিম (র) ও ‘যাদুল মা’আদ’ গ্রন্থে অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ফকীহগণের মতে হিরোইন, হাশীশ, ভাং, গাজা ইত্যাদি চাষাবাদ এবং আমদানী সব শরী’য়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, এর দ্বারা হারাম কাজে সহযোগিতা হয়। অথচ কুরআন মজীদে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
তোমরা পাপ ও সীমালংঘন করণে এক অন্যের সাহায্য করবে না।
অধিকন্তু এসব মাদক দ্রব্যের চাষাবাদ এবং আমদানীতে পাপের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি বুঝা যায়। অথচ গুনাহের কাজের প্রতি সন্তুষ্টিও গুনাহ। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন:
ان من لم ينكر المنكر بقلبه ليس عنده من الإيمان حبة خردل
কেউ যদি গর্হিত কাজকে হৃদয় দিয়ে অবজ্ঞা না করে তবে তার হৃদয়ে সরিষা পরিমাণও ঈমান নেই। (আল-ফিকহ্ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ, ৫ম খণ্ড)