আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেছেন:

لا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَنِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَدَكُمْ الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسْكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيْكُمْ أَوْ كَسَوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلْثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةٌ أَيْمَانِكُمْ إِذَا خَلَقْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَتِهِ لَعَلَّكُمْ

تشكرون .

তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু যে শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সে সবের জন্যে তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন। এরপর এর কাফফারা দশজন দারিদ্রকে মধ্যম ধরনের আহার্য দান যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও। অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাসমুক্তি এবং যার সামর্থ নেই তার জন্য তিনদিন রোযা রাখা, তোমরা শপথ করলে এটিই তোমাদের শপথের কাফ্ফারা, তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তার নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়িদা: ৮৯) কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা হলো, একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়া। ক্রীতদাস

ঈমানদার হওয়া শর্ত নয়। অথবা দশজন মিস্কীনকে খাদ্য খাওয়ানো অথবা দশজন মিস্কীনকে বস্ত্র দেওয়া। এ তিনটির কোনটি করতে সমর্থ না হলে একাধারে তিনদিন

রোযা রাখতে হবে। (শামী, ২য় খণ্ড)

শপথ ভঙ্গের কাফফারারূপে দাস মুক্ত করতে গেলে ক্রীতদাসটি কর্মক্ষম ও ব্যবহার উপযোগী হতে হবে। উপরন্তু কোন সূত্র থেকেই মুক্তি লাভের দাবিদার হতে

পারবে না। (শামী, ২য় খণ্ড)

কাফ্ফারা হিসেবে খাদ্য প্রাদানের ক্ষেত্রে ডাল, চাল, মাছ, তৈরি খাদ্য, গো ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে অথবা রান্না করা বা প্রস্তুত খাদ্য প্রদান করা যেতে পারে। তবে উভয় ক্ষেত্রে গ্রহিতাকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। আটা গম প্রদানের ক্ষেত্রে দশজন মিস্কীনের প্রতিজনকে অর্ধ সা অর্থাৎ ১ কেজি ৬শ ৫০ গ্রাম করে দিতে হবে। তবে যব প্রদান করলে এক সা দিতে হবে। যেমনটি প্রদান করা হয় ‘সাদাকা-ই-ফিত্র’ এর ক্ষেত্রে।

তৈরি খাদ্য খাওয়াতে গেলে ১০ জন মিস্কীনকে একদিন সকালে ও রাতে মোট দু’বেলা তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড) একজন মিসকীনকে প্রতিদিন অর্ধ সা করে গম ১০ দিন প্রদান করলে তাতেও

কাফ্ফারা আদায় হবে। (শামী, ২য় খণ্ড) একজন মিসকীনকে একইভাবে ১০টি পৃথক পৃথক সময়ে ১০ অর্ধ সা প্রদান করলে তা জায়িয হবে না। তরকারী ছাড়া রুটি খাওয়ালে চলবে না। অবশ্য গমের রুটি দিলে তরকারী ছাড়াও চলবে। সকাল বেলা একজন মিসকীনকে এবং রাতের বেলা অপরজনকে এ হিসেবে ১০ দিন খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। একজন মিসকীনকে সকালে খাদ্য খাওয়াল আর রাত্রের খাবারের জন্য মূল্য দিয়েছিল তা হলে জায়িয হবে। খাদ্য খাওয়াতে গেলে মিসকীনদেরকে তপ্তি সহকারে খাওয়াতে হবে। দশজনের প্রতিজনকেই বালিগ হতে হবে, একজনও যদি নাবালক হয় তবে কাফ্ফারা আদায় হবে না। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

দায়া হফোরা স্বরূপ বস্ত্র প্রদান করলে কমপক্ষে এমন পরিমাণ কাপড় দিতে হবে যাতে দেহের অধিকাংশ আবৃত করা যায়। সুতরাং শুধু পায়জামা দিলে জায়িয হবে না। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

বস্ত্রের মান হবে মধ্যম পর্যায়ের (শামী, ২য় খণ্ড) একজন মিসকীনকে একসাথে ১০টি বস্তু প্রদান করলে তা জায়িয হবে না। যেমন-একজন মিসকীনকে একই দিনে একসাথে ১০ দিনের খাদ্য প্রদান জায়িয নেই। যদি প্রতিদিন একটি করে বস্ত্র একজন মিসকীনকে ১০ দিনে ১০ টি বস্ত্র প্রদান করে তবে তা জায়িয হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

আহার কারানো, কাপড় প্রদান ও দাস মুক্তিতে অপারগ হলে একাধারে তিনদিন রোযা রাখবে। তবে শর্ত হলো, রোযা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারগতা বিদ্যমান থাকতে হবে। রোযা রাখার মেয়াদে যদি পূর্বের তিনটির কোন একটি আদায় করতে সক্ষম হয়ে উঠে তবে রোযা জনিত কাফ্ফারা বাতিল হয়ে যাবে এবং যেটিতে সক্ষম হলো সেটি দিয়ে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। দরিদ্র ব্যক্তি রোযা দ্বারা কাফ্ফারা আদায় করতে গিয়ে দু’দিন রোযা রাখার পর যদি স্বচ্ছল হয়ে উঠে তবে রোযা রাখা জায়িয হবে না। বরং অর্থ ব্যয় দ্বারা পুনরায় পূর্ণ কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। তিনটি রোযা পূর্ণ হওয়ার সামান্য আগেও যদি স্বচ্ছলতা আসে তবে তার রোযা দ্বারা কাফ্ফারা আদায় বাতিল হয়ে যাবে।

রোযা রাখার সময় মহিলাদের ঋতুস্রাব হলে, পুনরায় একাধারে তিনটি রোযা রাখতে হবে। কাফ্ফারা ওয়াজিব এমন ব্যক্তি তার সম্পদের কথা ভুলে দিয়ে যদি রোযার দ্বারা কাফ্ফারা আদায় করে তাতে কসমের কাফ্ফারা আদায় হবে না। (শামী, ২য় খণ্ড) কসমের কাফফারার ক্ষেত্রে স্বচ্ছলতা বলতে বুঝায় তার দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটানোর পর কসমের কাফফারা পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকা। দৈনন্দিন প্রয়োজন বলতে বুঝায় বসবাসের ঘর, সতর ঢাকা যায় এতটুক পরিধেয় বস্ত্র এবং একদিনের খাদ্য। যে সব বস্তুর দ্বারা কাফফারা আদায় করা হয় তা যদি কসম ভঙ্গকারী বাক্তির থাকে অর্থাৎ একটি ক্রীতদাস কিংবা কিংবা দশজন মিসকীনকে আহার্য পরিমাণ খাদ্য তবে তাই আদায় করতেমত বস্তু এক্ষেত্রে স্বচ্ছলতা আর অস্বচ্ছলতার হিসেব করা হবে না। হুবহু কাফফারার বস্তুগুলো না থাকলে তখন স্বচ্ছলতা ও অস্বচ্ছলতার বিষয়টি ধর্তব্য হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)