কসমের সংজ্ঞা ও পরিচিতি

কোন কথাকে মযবুত করা এবং এর প্রতি গুরুত্ব প্রদানের জন্যে সাধারণত কসম করা হয়ে থাকে। শরী’য়ত কসম করার অনুমতি দিয়েছে। তবে কোন ভাল কাজের জন্যে কসম করা হলে, শরী’য়ত সে কসম পূর্ণ করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। আর মন্দ কাজের জন্যে কসম করা হলে সে কসম পূর্ণ না করার নির্দেশ দিয়েছে। এবং ঐ কসম ভঙ্গ করে কাফ্ফারা আদায়ের হুকুম করেছে।

বিনা কারণে এবং বিনা উদ্দেশ্যে কসম করা শরীয়তে অপছন্দনীয়। কারণ এতে আল্লাহ্ তা’আলার নামে বে-ইয্যতী হয় এবং কসমকারী ব্যক্তি সমাজে হেয় প্রতিপন্ন ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে কসম সম্পর্কিত বিবরণ এসেছে। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন:

لا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَنِكُمْ وَلكِنْ يُؤَاخِدُكُمْ بِمَا عَقَدْتُمُ الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسْكِينَ مِنْ أوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كسوتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلُثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَيْتِهِ لَعَلَّكُمْ

تَشْكُرُونَ .

তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্যে আল্লাহ্ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না। কিন্তু তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্যে তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন। তারপর এর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের আহার্য দান যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান কিংবা একটি দাস মুক্তি এবং যার সামর্থ নেই তার তিন দিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করলে এটিই তোমাদের শপথের কাফ্ফারা। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করো। এভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে। তাঁর নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

মায়িদা: ৮৯) (সূরা

তিনি আরো ইরশাদ করেন:

لا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللغو فِي ايْمُنكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِدُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ . তোমাদের অর্থহীন শপথে আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না। কিন্তু তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্যে তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন। আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল। (সুরা বাকারা: ২২৫)

এ সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে:

عن أبي هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تحلفوا بابائكم ولا بأمهاتكم ولا بالانداد ولا علقوا بالله الا

وأنتم صادقون হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন: তোমরা তোমাদের পিতামাতার নামে কসম করো না এবং যাদের আল্লাহর সাথে শরীক করো যে, তাদের নামেও কসম করো না আর কসমের ক্ষেত্রে সত্যবাদী না হলে আল্লাহর নামে কসম করো না। (নাসাঈ ও আবু দাউদ) অপর হাদীসে আছে।

عن أبي هريرة رضى الله تعالى عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من حلف على يمين فرائ خيرا منها فليأت الذي فقد خير ثم ليكفر عن يمينه.

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করার পর এর বিপরীত বিষয়টি তার কাছে উত্তম বলে মনে হয় তবে সে যেন কল্যাণকর কাজটি সম্পাদন করে এবং কসমের কাফ্ফারা দেয়। (মুসলিম)

আল্লাহ্ তা’আলার সত্তাগত কিংবা গুণগত নাম উল্লেখ করে কোন কাজ করা কিংবা না করার বিষয় ব্যক্ত করাকে শরীয়তে কসম বলা হয়। কেউ যদি আল্লাহ তা’আলার সত্তা অথবা গুণাবলী ব্যতীত অন্য কিছুর নামে কসম করে অথবা বিনা কারণে ও উদ্দেশ্যহীনভাবে কসম করে তবে এটি শরী’য়তে কসমরূপে গণ্য হবে না।আরবী ভাষায় কলমকে ইয়ামীন (يمين)এবং কসম করাকে হলফ (حلف)বলা হয়। (শামী, ৩য় খণ্ড