১. গোপনে চুপিসারে ও সবার অলক্ষ্যে, মালিকের সম্মতি ছাড়া কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অথবা তার নিদ্রিতাবস্থায়, তার মালিকানাধীন বা দখলভুক্ত কোন মাল হস্তগত করে নেওয়া কিংবা নিয়ে যাওয়া।২. চুরিকৃত মাল চোর কর্তৃক পুরোপুরিভাবে নিজের দখলভুক্ত করা। চোর কর্তৃত ছরিকৃত মাল সম্পূর্ণরূপে স্বীয় দখলভুক্ত হওয়ার জন্যে তিনটি শর্ত পূর্ণ হওয়া আবশ্যক:
ক. চুরিকৃত মাল নিরাপদে সংরক্ষিত স্থান থেকে সরিয়ে আনতে হবে।
খ. চুরিকৃত মাল মালিকের দখলমুক্ত হতে হবে।
গ. চুরিকৃত মাল সম্পূর্ণরূপে চোরের নিজের আয়ত্বে আসতে হবে।
এই তিনটি শর্তের কোন একটি অপূর্ণ থাকলে চোর কর্তৃক চুরিকৃত মাদ পরিপূর্ণভাবে দখলভুক্ত হওয়া বিবেচিত হবে না এবং তখন চোরের হস্ত কর্তন করা যাবে না। দখলভুক্ত বিষয়টি যদি অপূর্ণ থাকে তাহলে চুরি সম্পূর্ণ হয়েছে বলে। বিবেচিত হবে না বরং চুরি শুরু হয়েছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে হস্ত কর্তনের শান্তি প্রযোজ্য না হয়ে তাযীরের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
৩. কারও মাল হস্তগত করার ক্ষেত্রে চুরির উদ্দেশ্য থাকা। হস্তগতকৃত মাল দখল বা মালিকানাভুক্ত করার অভিপ্রায় না থাকলে তা চুরিরূপে গণ্য হবে না এবং এজন্যে। চুরির ‘হন্দ’ হস্ত কর্তনের শাস্তিও প্রযোজ্য হবে না।
মোটকথা, উল্লিখিত শর্তসমূহ যে চুরিতে পাওয়া যাবে, সেই চুরিতেই শুধুমাত্র চুরির শাস্তি হিসেবে চোরের হস্ত কর্তন করা হবে। এই শর্তসমূহ যেই চৌর্যকর্মে বিদ্যমান নেই সেখানে চুরির ‘হন্দ’ হস্ত কর্তনের শাস্তি কার্যকর হবে না। বরং ‘তা’যীরের’ আওতায় চোরের শাস্তি হবে। আলমগীরী, ২য় খণ্ড কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ, ৫ম খণ্ড, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইনের ভাষ্য, প্রথম খণ্ড, প্রথম ভাগ ও আত-তাশরীউল জানাইল ইসলামী, ২য় খণ্ড)
যে চুরিতে ‘হন্দ’ সাব্যস্ত হয় এবং যে চুরিতে ‘হদ্দ’ সাব্যস্ত হয় না।
ইসলামী দেশে যা কিছু সহজলভ্য ও সাধারণভাবে পাওয়া যায় এবং সাধারণত যেসব বস্তুর সংরক্ষণ করা হয় না, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে, সেসব বস্তু চুরি করলে চোরের হস্ত কর্তন করা যাবে না। যেমন: জ্বালানী, লাকড়ী, ঘাস, বাঁশ, মৎস্য, পাখি শিকার, হরিতাল, লালমাটি, চুনামাটি প্রভৃতি।
মাছের মধ্যে লোনা, শুঁটকি ও তাজা মাছ সবটাই শামিল। হাঁস-মোরগ এবং কবুতরও পাখির অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ এগুলো চুরি করলে হাত কাটা হবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে একমাত্র মাটি ও ধুলা-বালি ছাড়া আর যা কিছুই চুরি করা হবে সে চুরির অপরাধে চোরের হাত কাটা হবে। (হিদায়া, ২য় খণ্ড) অপরের মালিকানাধীন ও দখলভুক্ত, সংরক্ষিত ‘নিসাব’ পরিমাণ মাল কিংবা এর মূল্য চুরি করলে চোরের হাত কাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) নিসাব পরিমাণ থেকে কম চুরি করার অপরাধে চোরের হাত কাটা হবে না।
(হিদায়া, ২য় খণ্ড) ইমামগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গম এবং চিনি চুরির অপরাধে হাত কাটা হবে। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
শুকনো ফলমূল যদি কেউ চুরি করে তাহলে তার হাত কাটা হবে। (হিদায়া, ২য় ২৩)
যে ফলমূল গাছে রয়েছে এবং যে ফসল এখনো ক্ষেত থেকে কাটা হয়নি সে ফলমূল আর শস্য, ফসল যদি কেউ চুরি করে তাহলে তার হাত কাটা হবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
যে ফলের বাগানে এবং যে শস্য ক্ষেতে পাহারাদার নিযুক্ত আছে সে বাগানের ফলমূল এবং সেই ক্ষেতের শস্য চুরি করলে চোরের হাত কাটা হবে। (হিদায়া, ২য়
খত ) কোন মালের নিকট তার মালিক উপস্থিত থাকা অবস্থায় কেউ যদি তা চুরি করে তাহলে চোরের হাত কাটা যাবে। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
গর্জন, শাল, আম, জাম, কাঠাল, কড়ই, চন্দন ইত্যাদি কাঠ চুরি করলে চোরের হাত কাটা হবে। অনুরূপ হিরা, মনি মুক্তা ইত্যাদি পাথর চুরি করলেও চোরের হাত কাটা যাবে (আলমগীরী ২য় খণ্ড হিদায়া, ২য় খণ্ড)
এমনিভাবে স্বর্ণ-রৌপ্য চুরি করলেও চোরের হাত কাটা যাবে।
যে কাঠ চুরি করলে হাত কাটা হয় না সে কাঠ দিয়ে দরজা, চেয়ার অথবা খাট পালঙ্ক কাঠের ফর্নিচার এবং বাঁশ-বেত দ্বারা তৈরি মূল্যবান আসবাবপত্র চুরি করলে চোরের হাত কাটা যাবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যেসব শুকনা ফলমূল দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য। যেমন- আখরোট, বাদাম, নারিকেল, সুপারি ইত্যাদি। এ জাতীয় ফলমূল যদি সংরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করা হয় তাহলে চোরের হাত কাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যে ফল পাকার পরে কাটা হয়েছে এবং যে গম ও ধান কেটে এনে সংরক্ষণ কল হয়েছে, কেউ যদি তা চুরি করে তাহলে তার হাত কাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড
দুর্ভিক্ষের সময়, কেউ যদি কারো নিকট থেকে কোন খাদ্যদ্রব্য চুরি করে নি যায়, তাহলে তার সেই চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না। চাই সে খাদ্যদ্র পঁচনশীল হোক কিংবা না হোক, চাই তা সংরক্ষিত স্থানে থেকে চুরি করা হোক বিক অরক্ষিত স্থান থেকে। সর্বাবস্থায় দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য চুরি করার দায়ে চুরির হদ্দ হস্ত কর্তন দণ্ড প্রয়োগ করা হবে না। পক্ষান্তরে বছর যদি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের হয় এবং কোন ব্যক্তি কারো নিকট থেকে দ্রুত পচনশীল খাদ্যদ্রব্য চুরি করে নিয়ে যায়, তাহলেও তার হাত কাটা যাবে না। তবে খাদ্যদ্রব্য যদি দ্রুত পাঁচনশীল না হয় এবং তা সংরক্ষিত থাকে, তাহলে এই খাদ্যদ্রব্য চুরি করার অপরাধে চোরের হাত কাটা যাবে।
উল্লিখিত বিধানের উপর ভিত্তি করে আমাদের হানাফী মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় ফকীহগণ ফলমূল সংক্রান্ত বিষয়ে বলেন, বছর যদি দুর্ভিক্ষের হয়, তাহলে ফলমূল চুরি করার দায়ে হস্ত কর্তন প্রযোজ্য হবে না। চাই সে ফলমূল দ্রুত পঁচনশীল হোক কিংবা না হোক চাই সেই ফলমূল বৃক্ষ-শাখায় সংযুক্ত থাকুক কিংবা সংরক্ষিত স্থানে সযত্নে থাকুক। অনুরূপভাবে, সুখ সমৃদ্ধির বছর হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত পঁচনশীল ফলমূল চুরি করার কারণে চোরের হাত কাটা যাবে না। চাই তা সংরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করা হোক কিংবা অরক্ষিত স্থান থেকে তবে ফল মূল যদি দ্রুত পঁচনশীল না হয় এবং তা যদি সংরক্ষিত স্থান থেকে চুরি করা হয়ে থাকে, তাহলে এই চুরির অপরাধে চোরের হস্ত কর্তন করা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
সর্বপ্রকার শস্যবীজ, তৈল, সুগন্ধি, অগর কাষ্ঠ, মেশক চুরি করলে হাত কাটা হবে। এমনিভাবে তুলা, কাতান, পশম চুরি করলেও হাত কাটা হবে। গম, যব, আটা, ছাতু, ঘৃত, খেজুর, কিশমিশ, যায়তুন তৈল, চুরি করলে হাত কাটা হবে। সর্বপ্রকার পরিধেয় বস্ত্র, বিছানা পত্র, লোহা, কাঁসা, সীসা, কাষ্ঠ ও চামড়ার তৈরি যাবতীয় পাত্র ও আসবাবপত্র, সর্বপ্রকার কাগজ, বিভিন্ন প্রকার ছুরি-চাকু, কাঁচি, পরিমাপ যন্ত্র, জীব জন্তুর গলাবন্ধ চুরি করলে হাত কাটা হবে। তবে পাথর চুরি করলে হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
মর্মর পাথর, প্রস্তর নির্মিত ডেগ এবং লবণ চুরি করলে হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
ইমাম আযম আবু হানীফা (র) বলেন, যাবতীয় শিং কাজে লাগান হোক বা না হোক, ব্যবহৃত হোক না হোক, তা চুরি করলে হাত কাটা হবে না। খেজুর গাছ কিংবা অন্য কোন গাছ যদি কেউ শিকড়সহ উদ্যান থেকে চুরি করে নিয়ে যায়, আর এর মূল্য হয় দশ দিরহাম পরিমাণ, তাহলেও হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
সিরকা, মধু চুরি করলে সর্বসম্মতিক্রমে হাতকাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
ইমাম মুহাম্মদ (র) হাতীর দাঁতের দ্বারা যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কোন কিছু তৈরি করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা চুরি করার দায়ে হাত কাটা হবে না। পক্ষান্তরে হানাফী মাযহাবের অন্যান্য ইমামগণের মতে হাতীর দাঁতের দ্বারা কোন কিছু তৈরি হোক বা না হোক কোন অবস্থাতেই তা চুরি করলে হাত কাটা হবে না। উটের দাঁত সম্পর্কে হানাফী ইমামদের অভিমত হলো, নিছক উটের দাঁত চুরির অপরাধে হাত কাটা হবে না। কেননা, উটের দাঁত সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে উটের দাঁত দিয়ে কোন কিছু তৈরি করার পর যদি তা চুরি করা হয়, তাহলে হাত কাটা হবে। কেননা ঐ দাঁতের দ্বারা কোন কিছু তৈরি করার পর তা কারুপণ্য হিসেবে স্বতন্ত্র মর্যাদা লাভ করে। এর দৃষ্টান্ত তখন এমন কাঠের মত হয়ে যায়, যে কাঠ দিয়ে কোন আসবাব পত্র তৈরি করা হয়েছে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) কাঁচ চুরি করলে জাহিরী রিওয়ায়াত মতে হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
শিকারের জন্তু চুরি করলে হাত কাটা হবে না। চাই সে জন্তু বন্য হোক বা না হোক। চাই সে শিকার জলের হোক কিংবা স্থলের। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) মেহেদি, শাক-সবজি এবং সুগন্ধি কাঁচা ফুল চুরি করলে হাত কাটা হবে না। মাটি
পানি ও চুনাপাথর চুরি করলে হাত কাটা হবে না। যবেহকৃত হিংস্র জন্তুর চামড়া দিয়ে যদি বিছানা কিংবা জায়নামায না বানানো হয়ে থাকে তাহলে তা চুরি করলে হাত কাটা হবে না। তবে যবেহকৃত হিংস্র জন্তুর চামড়া দিয়ে যদি বিছানা কিংবা জায়নামায তৈরি করা হয়ে থাকে, তাহলে তা চুরি করলে হাত কাটা হবে। খাদ্যের ডেক, ডেকচি চুরি করলে হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
পানীয়বস্তু তিন ভাগে বিভক্ত ১. হালাল, যথা- যবের শরবত এবং এ জাতীয় পানীয়। সুতরাং এই জাতীয় পানীয় চুরি করলে হাত কাটা হবে। ২. খেজুর এবং কিশমিশ ভিজান পানি। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এই জাতীয় পানীয় বস্তু চুরি করলেও হাত কাটা হবে। ৩. ‘খামার’-তথা এমন পানীয় যার মধ্যে মাদকতা আছে এবং সে মাদকতা বিবেক বুদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে, জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এই মাদক জাতীয় পানীয় বস্তু চুরি করলে হাত কাটা হবে না। মোটকথা হালাল পানীয় চুরি করলে হাত কাটা যাবে। পক্ষান্তরে হারাম পানীয় চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
তানপুরা, দফ, বাঁশি এবং যে কোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র চুরি করার কারণে হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
কুরআন শরীফ চুরি করার কারণে হাত কাটার শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। যদিও সেই কুরআন শরীফ স্বর্ণখচিত এবং সহস্র দিরহাম মূল্যের হয় তবুও তা চুরি করলে হাত কাটা হবে না। অনুরূপভাবে, ফিক্ (ইসলামী আইন ও বিধি-বিধান), নাহু (আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র) অভিধান ও কবিতার বই-পুস্তক চুরি করলেও হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)চামড়া এবং কাগজ যদি কেউ তাতে কোন কিছু লিখার আগে চুরি করে, তাহলে হাতকাটা হবে। হিসাব কিতাবের খাতাপত্র চুরি করলে হাতকাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)। জাফরান, ‘ওরাস’ (এক প্রকার রঙের ঘাস), আম্বর, ওয়াস্স্নাহ (এক প্রকার বৃক্ষ যার পাতার খিযাব তথা চুলের কলপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়) ‘কাতাম’ (এক প্রকার বৃক্ষ, যার দ্বারা খিযাব বানান হয় এবং যার শিকড় জ্বাল দিয়ে কালি তৈরি করা হয়। চুরি করলে হাত কাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
এমন ছোট বালক-বালিকা, যে ভালভাবে কথা বলতে পারে না এবং নিজের নাম ঠিকানা ও পরিচয় দিতে সক্ষম নয় এ ধরনের বালক-বালিকাকে ধরে নিয়ে গেলে চুরির পর্যায়ে পড়বে এবং যে ধরে নিয়ে গেছে তার হাত কাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) কেউ যদি ‘খীমাহ বা তাঁবু টানান অবস্থা থেকে চুরি করে, তাহলে তার হাত কাটা হবে না। আর যদি তাঁবু ভাঁজকৃত ও গুটানো অবস্থা থেকে চুরি করে থাকে তাহলে তার হাতকাটা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় নামে ‘ওসীয়্যাত ‘কৃত সম্পদ ওসীয়্যাতকারীর মৃত্যুর পূর্বেই চুরি করে, তাহলে তার হাত কাটা হবে। তবে ওসীয়্যাতকারীর মৃত্যুর পরে, ওসীয়্যাতকৃত মাল প্রাপ্তির পূর্বেই যদি তা চুরি করে নেয়, তাহলে তার হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
মালে গনীমত তথা যুদ্ধলব্ধ মাল থেকে যদি কেউ চুরি করে, তাহলে তার হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ এমন সম্পদ থেকে চুরি করে যে সম্পদের মধ্যে তার অংশ আছে তাহলে এই চুরির দায়ে তার হাত কাটা হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
একবার এক লোক চুরি করেছে, চুরির অপরাধে তার হাত কাটা হয়েছে এবং চুরিকৃত মাল মালিকের কাছে প্রর্ত্যপণ করা হয়েছে। পুনরায় যদি সে চোর ঐ মালকেই আবার চুরি করে, তাহলে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এই চোরের উপর আর হদ্দ হস্তকর্তন প্রযোজ্য হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
এক চোরের চুরিকৃত মাল যদি অপর চোরে চুরি করে নিয়ে যায় তবে এই চুরির দায়ে দ্বিতীয় চোরের হাত কাটা হবে না। এরূপ চুরির ক্ষেত্রে মালের প্রকৃত মালিক বা প্রথম চোর কেউই দ্বিতীয় চোরের হাত কাটার দাবি উত্থাপন করতে পারবে না।
এই ব্যাপারে মৌলিক বিধান হলো আসল মালের যদি এক লোক একশত দিরহাম চুরি করেছে, শাস্তিস্বরূপ তার হস্ত কর্তিত হয়েছে। দিরহামও মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে; কিন্তু আবার সে ঐ একশত দিরহাম চুরি করেছে। এমতাবস্থায় তার হাত কাটা হবে না। তবে যদি সে ঐ একশত দিরহামের সাথে আরো একশত দিরহাম চুরি করে নিয়ে আসে, তাহলে দ্বিতীয়বার তার উপর চুরির হদ্দ প্রযোজ্য হবে। দ্বিতীয়বার তার বাম পা কর্তন করা হবে। চাই এই উভয় শত দিরহাম একসাথে মিশ্রিত থাকুক কিংবা পৃথক থাকুক, তাতে কোন পার্থক্য নেই। যে কোন অবস্থাতেই হোক না কেন দ্বিতীয় শত দিরহামের জন্যে তার উপর পুনরায় চুরির হদ্দ কার্যকর হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
এক ব্যক্তি স্বর্ণ অথবা রৌপ্য চুরি করেছে। এজন্য হাত কাটা হয়েছে। এবং চুরিকৃত মালও মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অথবা চুরিকৃত মাল ছিল স্বর্ণ বা রৌপ্যের পাত্র। যদ্দরুণ চোরের হাত কাটা হয়েছে এবং সেই পাত্রও মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মালিক সেই পাত্র ভেঙ্গে দীনার অথবা দিরহাম তৈরি করেছে। এমতাবস্থায় সেই চোরই আবার তা চুরি করে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ইমাম আযম আবু হানীফা (র)-এর মতানুযায়ী সেই চোরের উপর দ্বিতীয়বার আর চুরির হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তার বাম পা আর কাটা হবে না। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসূফ (র) ও ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর মতানুযায়ী চোরের বাম-পা কর্তন করা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
কোন এক ব্যক্তি একটি গাভী চুরি করেছে। এই অপরাধে তার হাত কর্তিত হয়েছে। মালিকের কাছে গিয়ে গাভীটি প্রাপণ করা হয়েছে। মালিকের কাছে গিয়ে গাভীটি একটি বাছুর প্রসব করেছে। সেই চোর আবার সেই গাভীর বাছুরটি চুরি করেছে। এই অবস্থায় পুনরায় সে চোরের উপর হস্ত কর্তনের হদ্দ প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ তার বাম পা কর্তন করা হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যাকাতের মালকে এক লোক মূল মাল থেকে পৃথক করে রেখেছে গরীব মিসকীনের মধ্যে বিতরণ করার জন্যে। কিন্তু যাকাতের মালই চোর চুরি করে নিয়ে গেছে। এই অবস্থায় সে চোরের হাত কাটা হবে। কেননা এই যাকাতের মালের মধ্যে সেই মালিকের তখনও পর্যন্ত কর্তৃত্ব বিদ্যমান রয়েছে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
কাঠ দিয়ে আসবাব পত্র দরজা জানালা নির্মাণ করার পরে যদি কেউ তা চুরি করে তাহলে তার হাত কাটা হবে। (হিদায়া ২য় খণ্ড)