মনে দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা ও ভয় থাকলে মানুষ স্বভাবতই নিজেকে নিঃসঙ্গ নিঃসহায় বলে মনে করে, মানসিক দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহ তাআলার ধ্যানে নামাযে দাঁড়ায় তখন মনে এ ভাবের উদয় হয় যে, সে নিঃসঙ্গ নিঃসহায় নয়, তার উপর একজন ক্ষমতাশীল সাহায্যকারী দয়ালু সত্তা আছেন। নিমিষে তার মনে তাওয়াক্কুল অর্থাৎ আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা জন্মে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, অবশ্যই আল্লাহ নির্ভরশীল লোকদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে এমরান: আয়াত ১৫৯) যেব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।
(সূরা তালাক: আয়াত ৩) এ জন্য নামাযে সাহস বাড়ে; নামাযী মানুষ বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করতে সমর্থ হয় ও আত্মহত্যারূপ পাপ করে না। নামাযের সময় ঊর্ধ্বে হাত উঠালে ফুসফুস প্রশস্ত হয়। রুকু পাকস্থলী সবল করে হজমে সাহায্য করে। সেজদার সময় ঘাড়, মুখমন্ডল মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত হয়। নামায নম্রতা ও দীনতা শিক্ষা দেয়, মনের অহংকার চাপিয়ে রাখে।
আধুনিক মানসিক রোগের চিকিৎসকগণ বলেন, মানুষের মনে এমন কতকগুলো দুঃখ-কষ্ট ও ক্ষোভ থাকে যা অন্যের নিকট প্রকাশ না করলে লাঘব হয় না। বিশেষ করে স্ত্রীলোকেরা যে পর্যন্ত অন্যের নিকট তাদের দুঃখ-কষ্ট ইনিয়ে বিনিয়ে বর্ণনা করতে না পারে সে পর্যন্ত তাদের ক্ষোভ দূর হয় না। ফিরিস্তিসহ অন্তরের দুঃখ-কষ্ট বর্ণনা করতে পারলেই দুঃখ লাঘব হয়েছে বলে তারা মনে করে। ফলতঃ তা অনেকটা লাঘবও হয়ে যায়। কিন্তু কোন কোন মানুষ জীবনে এমন লজ্জাজনক জঘন্য কাজ করে থাকে যা অন্যের নিকট কিছুতেই প্রকাশ করতে পারে না, ঐ সকল কাজের গ্লানি ও অনুশোচনা অজ্ঞাতসারে মনে নানা রকম বিকার সৃষ্টি করে দুরারোগ্য ব্যাধির সূচনা করে। কিন্তু নামাযে অকপটে সে সকল অপরাধ আল্লাহর নিকট স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়, তাতে মনে আশার সঞ্চার হয়, শান্তির ভাব উদয় হয়। মানুষ স্বভাবতঃ চঞ্চল ও গতিশীল। একই ধরনের কাজে অনেকক্ষণ লিপ্ত থাকা মানুষের স্বভাব নয়। নামাযের মাধ্যমে কর্মধারা পরিবর্তনের যে সুযোগ পাওয়া যায়, অন্য কোন কাজে তা হয় না। সেজন্যই হাদীস শরীফে আছে, নামাযে উদ্যম বাড়ে, কাজ সহজসাধ্য হয়, স্বাস্থ্য অটুট থাকে, অযথা জীবনীশক্তি ক্ষয় হয় না। নামাযী মানুষ সংক্রামক ব্যাধি হতে অব্যাহতি পায়, তাদের সন্তানাদি সবল হয়। নামায শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। নামাযীকে তাড়াতাড়ি বার্ধক্য আক্রমণ করতে পারে না। রুকু ও সেজদা এই ভারসাম্য রক্ষা করে। নামাযের দ্বারা অধিকাংশ বালা-মসিবত দূর হয়। নামায আত্মাকে নির্মল, শান্তিপূর্ণ ও সবল করে
আল্লাহ তাআলার নিকটবর্তী করতে থাকে।
নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ডাঃ ক্যারল বলেছেন, আল্লাহ তাআলার উপাসনায় মনে যেরূপ শক্তি ও উদ্যমের সৃষ্টি হয়, অন্য কোন কিছুতে তা হয় না। তিনি বলেছেন, ডাক্তার হিসাবে আমি লক্ষ্য করেছি, যে রোগ কোন ওষুধে আরোগ্য হয়নি, তা আল্লাহর নিকট প্রার্থনায় অনায়াসে আরোগ্যও হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা বিফলে গেছে এমন কোন ঘটনা আমার জানা নেই। বাইবেলে বর্ণিত আছে, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা অসাধ্য সাধন করতে পারে। নামাযের মধ্যে আত্মেন্দ্রিয় প্রীতির বাসনা বর্তমান আছে, তা না হলে কেউই নামাজ পড়ত নাহ।