আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে শুধু আমার এবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত: ৫৬ আয়াত)

প্রায় সকল জাতির মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার এবাদত-উপাসনা ধর্ম বিধানের অন্তর্গত। যে জাতির মধ্যে অধ্যাত্মিক চর্চার অভাব সে জাতিই প্রকৃতপক্ষে নির্বোধ। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে:

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتٰبِ وَأَقِمِ الصَّلُوةَ إِنَّ الصَّلُوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ .

উচ্চারণ: উত্তু মা উহিয়া ইলাইকা মিনাল কিতাবি ওয়া আকিমিসসালাহ, ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশায়ি ওয়াল মুনকার। অর্থঃ হে মুহাম্মদ (সাঃ)! তোমার উপর যে পবিত্র কিতাব (কোরআন) অবতীর্ণ হয়েছে, তা পড় এবং নামায প্রতিষ্ঠিত কর; নিশ্চয় নামায অশ্লীলতা ও দুষ্কার্য প্রতিরোধকারী। (সূরা আনকাবৃত: আয়াত ৪৫) এখানে কোরআন পাঠ করার পরেই আল্লাহ তাআলা নামায প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আদেশ করেছেন। প্রতিদিন মনোযোগ সহকারে অযুর সহিত পাঁচ বার নামায পড়া প্রতিটি বয়স্ক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমানের জন্য ফরয। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, শিরক ও কুফরী ইত্যাদি কবীরা গোনাহ ছাড়া নামায মানুষের প্রাত্যহিক অন্যান্য গোনাহ ক্ষমাকারী ও সংশোধক। ফলতঃ যারা নিয়মিত আল্লাহর স্মরণে নামায পড়ে থাকেন তাঁরা যে অশ্লীলতা ও অপকর্মে লিপ্ত হতে পারেন না তা ধ্রুব সত্য। এজন্য নামায ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ রোকন বা মঙ্গলময় এবাদত বলে নির্দিষ্ট হয়েছে। নামায বেহেস্তের চাবি ও সকল এবাদতের মূল ভিত্তি। ঈমানদারদের জন্য নামায রাজ্য সমতুল্য। নামায ছাড়া অতীতেও কেউ অলীআল্লাহর মর্যাদায় মর্যাদাবান হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। হাশরে সর্বপ্রথম নামাযেরই হিসাব লওয়া হবে। আল্লাহর সাথে মানুষের সংযোগ সাধনই নামাযের প্রধান লক্ষ্য। আল্লাহর ধ্যান ও স্মরণই নামাযের প্রাণ। প্রাণহীন নামাযে কোন লাভ হয় না, বরং আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি উৎপাদন করে। কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার স্মরণের জন্য নামায প্রতিষ্ঠিত কর। (সূরা ত্বোয়াহা: আয়াত ১৪)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে নামাযে আল্লাহর স্মরণ হয় না, সে নামাযের দিকে আল্লাহ দৃষ্টিপাতও করেন না। যে নামাযে মন আল্লাহ্র ধ্যানে মগ্ন হয়, শুধু সে নামাযই পরকালের পাথেয়। যেব্যক্তি দীনতা ও নম্রতার সাথে যথানিয়মে নামায আদায় করে, তার নামায আরশ পর্যন্ত পৌছে। বর্ণিত আছে, হযরত আলী (রাঃ)-এর দেহে তীরবিদ্ধ হলে তা তাঁর নামাযের সময় বের করা হয়েছিল। তাঁর মন নামাযে এমনভাবে মগ্ন ছিল যে, তিনি কোন কষ্টই অনুভব করেননি। মুত্যু ও কবর আযাবের কথা চিন্তা করলে মন আল্লাহর প্রতি রুজু হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তওহীদের পর আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নামায অপেক্ষা উত্তম বস্তু আর কিছুই দান করেননি। যেব্যক্তি নামায ত্যাগ করেছে সে ইসলামকে ধ্বংস করেছে, যেখানে নামায নেই সেখানে ইসলামও নেই। দন্ডায়মান হয়ে, রুকু করে অবশেষে দেহের শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মাথা মাটিতে লুটিয়ে সেজদায় পড়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের যে বিধান নামাযে রয়েছে, দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মে তা নেই। আর কোন ধর্মই মানুষের সাথে আল্লাহর সংযোগ সাধনের এমন সর্বাঙ্গীণ সুন্দর ব্যবস্থা দিতে পারেনি। জনৈক ইউরোপীয় দার্শনিক বলেছেন, মুসলমানগণ তাঁদের নামাযে সমস্ত দেহ মন নিয়োগ করে বলে তাঁদের প্রার্থনা খুব জোরদার হয়। কোন শক্তির নিকট নতিস্বীকার করা আল্লাহ তাআলার এবাদতের বহির্ভূত। সেজন্যই তাঁর ক্ষমতা ও শক্তির নিকট নতিস্বীকার করে নামায পড়া তাঁর নিকট অতি পছন্দনীয়। নামাযের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য লাভ সহজ হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন-

“যেকোন বিপদাপদ উপস্থিত হলে ধৈর্যের সাথে নামায পড়।”

(সূরা বাকারা: আয়াত ৫৫)

বিপদাপদে নামায দ্বারা আশাতীত ফল পাওয়া গেছে, এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। কোন বিপদ উপস্থিত হলে সকল নবীই নামাযের আশ্রয় নিতেন। শরীর, মন ও বাক্য সংযোগে যে এবাদত হয় তা শুধু নামায দ্বারাই সাধিত হতে পারে। কঠিন রোগাক্রান্ত হলেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনও নামায ত্যাগ করেননি।

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক সৎকাজের জন্য ইহকাল পরকাল উভয় স্থানেই পুরস্কার ও সুফল নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। তার কারণ, সৎ কাজ দ্বারা পরকালে পুরস্কার লাভ ভবিষ্যতের ব্যাপার। এটা মানব চক্ষুর অন্তরালে, তাই কেউ পরকালের ফলাফল নিজে দেখতে পায় না এবং অন্যকেও দেখাতে পারে না। এটা ঈমান বা বিশ্বাসের বিষয়। নেক কাজ দ্বারা এ দুনিয়ায় কোন ফল লাভ না হলে শুধু ভবিষ্যতের দিকে বিশ্বাস করে কেউ সেদিকে আকৃষ্ট হত না, অথবা আকৃষ্ট হলেও বেশী দিন মনোযোগী থাকতে পারত না। মানুষের স্বভাব, “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকীর খাতায় শূন্য, ফাঁকি।” মানুষ এই স্বভাবের অধীন বলেই আল্লাহ তাআলা নেক কাজের কিছু কিছু সুফল এই জগতেও দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কেননা নেক কাজে ইহকালে সুফল লাভ হলে পরকালেও সুফল লাভের বিষয়ে কোন সন্দেহই থাকতে পারে না। কোন মানুষই এটা অস্বীকার করতে পারে না যে, নেক কাজ দ্বারা কোন না কোন সময় তার লাভ হয়নি; তবুও মানুষ সৎ কাজের প্রতি আকৃষ্ট না হওয়ার কারণ তার নগদপ্রাপ্তির প্রতি ঝোঁকপ্রবণ স্বভাব। ঐ স্বভাবের কারণেই মানুষ ভবিষ্যতকে অগ্রাধিকার দিতে কুণ্ঠিত হয়। আবার এও সত্য যে, মানুষের স্বভাবের ফলেই পৃথিবী উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে।