আমেরিকান মানসিক রোগের চিকিৎসাবিদ অধ্যাপক হার্বার্ট আরমান বলেন, ভারত উপমহাদেশে ও এশিয়ার সর্বত্র মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের রিপোর্টেও এ কথা স্বীকার করা হয়েছে। তিনি এর কারণ নির্দেশ করতে গিয়ে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অশান্তি, দুর্ভাবনা-দুশ্চিন্তা, আশা-নিরাশার ঘাত প্রতিঘাত ও নিরাপত্তার অভাবই এর মূল কারণ। এ সকল সমস্যা মানুষকে সম্পূর্ণ পাগল না করলেও সামাজিক দিক থেকে বিব্রত করে তোলে। এ অবস্থার শিকার হলে মানুষ যোগ্যতা, কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা হারিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কেবল পাগল হলেই মানসিক রোগ হয় তা নয়। এ অবস্থার শিকার হলে দেহের রোগ যেরূপ, মনের রোগও সেরূপ। দেহ সুস্থ না থাকলে যেরূপ মন সুস্থ থাকে না, তেমনি মন সুস্থ না থাকলে দেহও সুস্থ থাকে না। সুতরাং উভয়ের সুস্থতাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে মানসিক রোগ ও দৈহিক রোগ হতে কম ক্ষতিকর নয়। প্রসিদ্ধ জার্মান মানসিক রোগ চিকিৎসক ডাঃ ব্রিল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক উইলিয়াম জেমস প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসকগণ অনেক গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা হতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও ভয় মানুষের অর্ধেকের বেশী রোগের কারণ; আর ধর্ম বিশ্বাস ও আল্লাহ তাআলার এবাদত ছাড়া দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা এবং ভয় দূর করার অন্য কোন ব্যবস্থা নেই।

ওষুধ বা ইনজেকশনে এর প্রতিকার সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলার এবাদত ও স্মরণ মানুষের মনকে প্রশস্ত এবং মজবুত করে জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ, দৃপ্তিময় ও আশান্বিত করে, ভয় দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা দূরে ঠেলে দেয়। তারা দ্বিধাহীন চিতে ঘোষণা করেছেন, পাকস্থলীর ঘা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, পাগল হওয়া, বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ ও হৃদরোগ প্রভৃতি কঠিন রোগ ধর্মপরায়ণ মানুষলে সাধারণতঃ আক্রমণ করতে পারে না। মনের অবস্থা দেহের উপর বিশেষ ক্রিকরে থাকে, এটা নিঃসন্দেহ। মনে অত্যধিক ভয়ের উদয় হলে মুখের ক্ষারধর্মী লালা একেবারে শুকিয়ে যায়। দুর্ভাবনা দুশ্চিন্তায় পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড অধিক মাত্রায় সৃষ্টি হয়ে যেরূপ পাকস্থলীর উপর স্তরে ঘা সৃষ্টি করে, তদ্রূপ দুর্ভাবনার ফলে রক্তের চাপ ও তাপের তারতম্য ঘটে; দেহের অক্সিজেন রক্তে নিহিত শর্করা জ্বালাতে সক্ষম হয় না। সুতরাং অদপ্ত চিনি প্রস্রাবের সঙ্গে বের হতে শুরু করে। এটাই বহুমূত্র রোগের প্রধান কারণ। এই একই কারণে দেহের রক্ত চলাচল নিয়মিত না হওয়ার দরুন উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ ও হৃদরোগের উৎপত্তি হয়ে শরীরের স্নায়ুগুলো ক্রমশঃ শিথিল ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

ডাঃ ফার্ল জাঙ্গ তাঁর রচিত “আত্মার সন্ধানে বর্তমান মানব” নামক পুস্তকে লেখেছেন, আমি অসংখ্য মানসিক রোগীর চিকিৎসা করেছি, কিন্তু যারা ধর্মভাবাপন্ন হতে পারেনি, তাদের কেউই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেনি।” তিনি আরও বলেছেন, “ধর্ম ভাবই মানুষকে জীবনীশক্তি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে।”