যিনার শাস্তি ২ প্রকার: ১. রজম বা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীর উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করা এবং ২. জালদ বা অপরাধীকে একশত বেত্রদণ্ডে দণ্ডিত করা। অপরাধী মুহসিন হলে তাকে রজমের শাস্তি প্রদান করবে। আর যদি সে মুহসিন না হয় তাহলে তাকে একশত ঘা বেত্র প্রদান করবে।
রজম করার সময় অপরাধীকে কোন খালি মাঠে নিয়ে যাবে। তারপর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করতে থাকবে। রজমের শাস্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণকে শাস্তির স্থলে একত্রিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা মুস্তাহাব। বিচারকের নির্দেশে রজমের লোকেরা নামাযের মত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। একদল রজম করার পর তারা পিছিয়ে আসবে। তারপর আরেক দল এগিয়ে যাবে এবং রজম করতে থাকবে। রজম করার সময় রজমকারী প্রস্তর নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার নিয়্যত করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে রজমকৃত ব্যক্তি যদি রজমকারীর এমন নিকটাত্মীয় হয় যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম তবে সে ক্ষেত্রে এরূপ নিয়্যত করা মুস্তাহাব নয়।
যখন সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা রজম ওয়াজিব হয়, তখন সাক্ষীদের দ্বারা তার সূচনা করা আবশ্যক, তারপর বিচারক এবং তারপর অন্যান্য লোক। সাক্ষীগণ যদি রজমের সূচনা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তা হলে অভিযুক্তের উপর হতে রজম রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু এই অস্বীকৃতির কারণে সাক্ষীদের উপর কাযাফের হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। কেননা তাদের এই অস্বীকৃতি সাক্ষ্য প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নয়। অনুরূপ সাক্ষীদের একজন বিরত থাকলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি রজম থেকে নিষ্কৃতি পাবে এবং উক্ত সাক্ষীর উপর কোন হদ্দ আসবে না। একইভাবে সাক্ষীগণ সকলে অথবা তাদের কেউ যদি মারা যায় অথবা অদৃশ্য হয়ে যায়, অথবা তাদের সাক্ষ্যদানের যোগ্যতা রহিত হয়ে যায়, তবে এর দ্বারা হদ্দ রহিত হয়ে যাবে। যদি সাক্ষীদের কেউ হস্তকর্তিত হয় অথবা সে এমন অসুস্থ হয় যে, প্রস্তর নিক্ষেপ করতে সক্ষম নয় তবে সে উপস্থিত থাকলে তার পক্ষ হতে বিচারক তার সূচনা করবেন। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি মুহসিন না হয় তাহলে সাক্ষীগণের মৃত্যু এবং তাদের অনুপস্থিতির সময়ও তার উপর হদ্দ কার্যকর হবে। এ দু’অবস্থা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় তা বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রজম ছাড়া অন্য কোন হদ্দের ক্ষেত্রে সাক্ষী ও বিচারকের দ্বারা তার সূচনা জরুরী নয়।
যদি রজম অপরাধীর নিজের স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় তা হলে বিচারক নিজেই রজমের সূত্রপাত ঘটাবেন এবং তারপর অন্যান্য লোকেরা রজম করবে। রজম দ্বারা নিহত ব্যক্তিকে গোসল দিতে হবে এবং তাকে কাফন পরিধান করিয়ে তার জানাযা পড়তে হবে।
আর অপরাধী যদি মুহসিন না হয়ে গায়রে মুহসিন হয় তা হলে তাকে একশ’ ঘা বেত্র-দণ্ড প্রদান করবে, যদি সে স্বাধীন হয়। পক্ষান্তরে অপরাধী যদি গোলাম হয় তাহলে তাকে পঞ্চাশ ঘা বেত্র-দণ্ড প্রদান করবে। বিচারক গেরু-বিহীন বেত্র দ্বারা মধ্যম ধরনের বেত্রাঘাত করার নির্দেশ প্রদান করবেন। কোন অবস্থাতেই শরী’য়ত নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা বৈধ হবে না। এমন ব্যক্তি দ্বারা তা কার্যকর করতে যে হবে বুদ্ধিমান ও চক্ষুষ্মান। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই-বরং উভয়ই সমান।
যদি তারা উভয়ে মুহসিন হয় তাহলে রজমের শাস্তি প্রদান করবে। পক্ষান্তরে উভয়ে গায়রে মুহসিন হলে তাদেরকে বেত্রদণ্ড প্রদান করবে।
হদ্দ এবং তা’যীরের সময় অপরাধী পুরুষের জামা খুলে ফেলবে এবং একই ইযারের মধ্যে তাকে প্রহার করবে। কিন্তু মহিলা অপরাধীকে বস্ত্রমুক্ত করবে না। তবে তার প্রয়োজনীয় বস্ত্র ছাড়া অতিরিক্তগুলো আলাদা করে ফেলবে। মহিলা অপরাধীকে উপবিষ্ট অবস্থায় প্রহার করবে। রজমের সময় তার জন্য গর্ত খনন করে তাকে তাতে স্থাপন করা জায়িয, তবে না করলেও কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু তাঁর জন্য গর্ত খনন করাই উত্তম। গর্তটি বুক পর্যন্ত খনন করতে হবে। পুরুষের জন্য গর্ত খনন করবে না। সর্বপ্রকার হদ্দের ক্ষেত্রে পুরুষকে দণ্ডায়মান অবস্থায় রেখেই তার উপর প্রহার করা হবে। কোন হদ্দের ক্ষেত্রেই তাকে কোন কিছুর সাথে বেঁধে রাখবে না ও কোন কিছুর সাথে আটকিয়েও রাখবে না বরং তাকে দণ্ডায়মান অবস্থায় মুক্ত ছেড়ে দিবে। তবে এ অবস্থায় হদ্দ কার্যকর করতে অক্ষম হলে তাকে বেঁধে নিতে কোন অনুবিধা নেই।
প্রহারগুলো ভিন্ন ভিন্নভাবে সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গে ছাড়িয়ে দিবে। তবে চেহারা মস্তক ও লজ্জাস্থানকে এ থেকে বাদ রাখবে। মুহসিনের ক্ষেত্রে রজম ও বেত্রদণ্ড একই সাথে প্রয়োগ করা যাবে না এবং গায়রে মুহসিনের ক্ষেত্রে বেত্রদণ্ড ও দেশান্তর এক সাথে কার্যকর হবে না। তবে বিচারক তার সুবিবেচনা দ্বারা তা কল্যাণকর মনে করে থাকলে ত’যীরের আওতায় দেশান্তরের নির্দেশও প্রদান করতে পারবেন।
যদি কোন অসুস্থ ব্যক্তির উপর হদ্দ ওয়াজিব হয়ে যায় এবং সে হদ্দটি রজম হয় তাহলে অসুস্থতার কারণে তাতে বিলম্ব করা যাবে না বরং ওয়াজিব হওয়ার সাথে সাথে তা কার্যকর করতে হবে। আর যদি সে হদ্দটি রজম না হয় বরং বেত্রাঘাত হয় তবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর করা হতে বিরত থাকবে। কিন্তু যদি সে এমন রোগী হয় যার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তাহলে তৎক্ষণাৎ তা কার্যকর করতে হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)