চারজন স্বাধীন মুসলিম পুরুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য ব্যতীত যিনার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় না। যদি যিনার ব্যাপারে চারের কম-একজন অথবা দুইজন অথবা তিনজন স্বাধীন মুসলিম পুরুষ সাক্ষ্য প্রদান করে তবে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। এবং উক্ত সাক্ষীগণের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে।
চারজন লোক কোন একজন পুরুষের বিরুদ্ধে যিনার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করার পর বিচারকের নিকট স্বীকারোক্তি করে বলে যে, তারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেছে তাহলে তাদের উপর কাযাফের হদ্দ প্রযোজ্য হবে। এ অবস্থায় বিচারক তাদের উপর উক্ত হদ্দ প্রয়োগ করার পূর্বেই যদি অপর চারজন লোক ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে যিনার সাক্ষ্য প্রদান করে তাহলে তাদের এ সাক্ষ্য প্রদান বৈধ হবে এবং এ সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে অভিযুক্তের উপর হদ্দ প্রয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রথমোক্ত সাক্ষীগণের উপর হতে কাযাফের হদ্দ রহিত হয়ে যাবে।
বেত্রদণ্ড প্রয়োগের ফলে আহত অথবা মৃত্যুবরণ করার পর সাক্ষীগণ যদি তাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তবে এ জন্য ইমাম আযম আবু হানীফা (র)-এর মতে সাক্ষীগণের উপর কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ বর্তাবে না। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ (র) এবং ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর মতে দণ্ডিত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ না করলে তার আহত হওয়ার কারণে সাক্ষীগণের পক্ষ হইতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর মৃত্যুবরণ করলে দিতে হবে দিয়াত-রক্তপণ।
কোন গায়র মুহসিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে বিচারক কর্তৃক বেত্রদণ্ড প্রয়োগ করার ফলে দণ্ডিত ব্যক্তি আহত হওয়ার পর সাক্ষীগণের কোন একজন সাক্ষী তার সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণে তার উপর ক্ষতিপূরণ বর্তাবে না। অনুরূপ ইমাম আযম আবূ হানীফা (র)-এর মতে মৃত্যুবরণ করার পরও প্রত্যাহারকারী অথবা বায়তুল মাল কারও উপরই এর ক্ষতিপূরণ প্রদান আবশ্যক হবে না।
বেত্রদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীর উপর হদ্দ প্রয়োগ করার সময় একটি মাত্র বেত্রাঘাত বাকি আছে এমতাবস্থায় যদি সাক্ষীদের কোন একজন তার সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তবে সাক্ষীদের সকলের উপর কাযাফের হদ্দ অবধারিত হবে। এ অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর হতে অবশিষ্ট হদ্দ রহিত হয়ে যাবে।
লোকেরা এবং সাক্ষীগণ মিলে রজম করতেছিল এমতাবস্থায় রজমকৃত ব্যক্তির মৃত্যুবরণ করার পূর্বে যদি সাক্ষীদের কোন একজন স্বীয় সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয়, তবে সাক্ষীদের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে।
যদি সাক্ষীগণ সকলে বিচারকের রায়ের ঘোষণা প্রদান ও তা কার্যকর হওয়ার পর নিজেদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে তাদের সকলকে কাযাফের শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং সাক্ষীগণের মাল হতে তার ক্ষতিপূরণ শোধ করতে হবে।
যদি সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচজন হয় এবং সাক্ষ্য প্রদান করার পর তাদের একজন নিজ সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে অবশিষ্ট সাক্ষীগণের সাক্ষ্য দ্বারা অভিযুক্তের উপর যথারীতি হদ্দ বাস্তবায়িত হবে। যদি পাঁচজন সাক্ষী কোন ব্যক্তির ব্যাপারে যিনা ও মুহসিন হওয়ার সাক্ষী প্রদান করে এবং তাকে রজম করার পর তাদের থেকে একজন সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে উক্ত প্রত্যাহারকারীর উপর কিছুই বর্তাবে না। কিন্তু উক্ত সাক্ষীর মত যদি আরেকজন সাক্ষী স্বীয় সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে তবে তাদেরকে রক্তপণের এক-চতুর্থাংশ জরিমানা প্রদান করতে হবে এবং তাদের উভয়ের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে। এভাবে তাদের পর যে কোন একজন সাক্ষী স্বীয় সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নিলে তার উপর রক্তপণের এক-চতুর্থাংশ প্রদান করা আবশ্যক হয়ে যাবে। আর যদি সাক্ষীদের পাঁচজনের সকলে একসাথে প্রত্যাহার করে তবে তাদের প্রত্যেকের উপর রক্তপণের এক-চতুর্থাংশ করে ওয়াজিব হবে।
যদি ছয়জনের সাক্ষ্য দ্বারা কাউকে রজম করা হয়, তারপর তাদের থেকে দুইজন ‘সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে নেয় তা হলে তাদের উপর কিছুই আবশ্যক হবে না। কিন্তু তাদের সাথে যদি আরেকজন প্রত্যাহার করে তবে তাদের উপর রক্তপণের এক চতুর্থাংশ পরিশোধ করা আবশ্যক হয়ে যাবে এবং তাদের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)