অপবাদ আরোপের শব্দ সমূহ তিন প্রকার ১. সারীহ )صريح( স্পষ্ট, বা প্রত্যক্ষ,
কিনায়াহ (کتاب) অস্পষ্ট বা পরোক্ষ ৩. তারীয় (تعريض)ইংগিত বহ।
২. ১. ফকীহগণের সর্বসম্মত রায় অনুযায়ী সারীহ্ তথা স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ শব্দ দ্বারা অপবাদ আরোপ করা হলে এতে অপবাদদাতার উপর হদ্দে কাযাফ তথা অপবাদের দণ্ড কার্যকর হবে। যেমন কেউ কাউকে সম্বাধন করে বলল, হে ব্যভিচারিণী কিংবা বলল, তুমি যিনা করেছ অথবা এরূপ কর না। তারপর সে যদি শরী’য়ত সম্মত পন্থায় সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করতে না পারে তবে তার উপর হন্দে কার্যাফ কার্যকর হবে।
২. কিনায়াহ (كتابة) তথা অস্পষ্ট বা পরোক্ষ শব্দাবলী হলো নিম্নরূপ-যেমন কোন পুরুষ কোন মহিলাকে বলল ইয়া ফাসিকাহ (ম)। অর্থাৎ পাপাচারী কিংবা বলল, ইয়া ফাজিরাহ (يا فاجرة) অর্থাৎ হে দুশ্চরিত্রা নারী অথবা বলল, ইয়া খবীসাহ (يا خبيثة) অর্থাৎ হে ভ্রষ্টা রমণী কিংবা বলল হে ব্যবসায়ী নারী। অথবা বলল হে হারামযাদী কিংবা কোন মহিলা কোন পুরুষের ক্ষেত্রে অনুরূপ শব্দ প্রয়োগ করল অর্থাৎ বলল হে গুণ্ডা, হারামযাদা ইত্যাদি। তাহলে এমতাবস্থায় শুধুমাত্র এসব শব্দ ব্যবহার করার কারণে তা শরী’য়তে কাযাফ হিসেবে গণ্য হবে না এবং যে ব্যক্তি এ সব শব্দ ব্যবহার করেছে তার উপর কাযাফ-এর হদ্দও প্রযোজ্য হবে না। তবে কেউ যদি এসব শব্দ, অপবাদের উদ্দেশ্যে কাউকে বলে, তাহলে তা নিশ্চয়ই কাযাফ-এ হদ্দও প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি উপরোক্ত শব্দাবলী কারো উপর প্রয়োগ করার পর বলে, আমি এসব অপবাদের নিয়্যতে বলিনি এবং প্রতিপক্ষ তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তাহলে তার কথাই শপথের সাথে গৃহীত হবে। এ ক্ষেত্রে বিচারকের উপর কর্তব্য হবে, সুবিচার আলোকে তার উপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা। কেননা, সে এসব অশ্লীল শব্দ দ্বারা এক ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়েছে তার মানহানি করেছে এবং যিনার অপবাদ না হলেও অন্তত তাকে কলংকিত করেছে। যেহেতু শুধুমাত্র কিয়াস তথা অনুমানের উপর ভিত্তি করে হদ্দ কার্যকর করা যায় না, সেহেতু এক্ষেত্রে একমাত্র তাযীর তথা শাস্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৩. তারীয় (تعريض)অর্থাৎ ইঙ্গিতবহ শব্দ কারো প্রতি প্রয়োগ করা। যেমন কেউ কাউকে সম্বোধন করে বলল, হে বৈধ সন্তান। অথবা বলল, আমি তো কখনো যিনা করিনি কিংবা বলল, আমার বংশধারা তো পরিচিত অথবা বলল আমার মা ব্যভিচারিণী নয় ইত্যাদি।
এই তারীয অর্থাৎ ইঙ্গিতবহ শব্দ দ্বারা কাযাফ কিনা এ ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে হানাফী ইমামগণের মতে, এর দ্বারা কাযাফ হয় না। যদিও কাযাফের উদ্দেশ্যেই এসব শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। (কিতাবুল ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ, ৫ম খণ্ড)
কেউ যদি কাউকে বলে, হে ব্যভিচারী। এমন সময় অপর এক লোক বলল, সত্য বলেছ তা হলে এসব সমর্থনসূচক শব্দ দ্বারা অপবাদ হবে না। পক্ষান্তরে যদি সে বলে, সত্যই বলেছে, তুমি যেমন বলেছো, সে তেমনই ছিল। তাহলে তা অপবাদরূপে গণ্য হবে। কারণ প্রথম ব্যক্তি সে লোক সম্পর্কে যেই বিশেষণ বর্ণনা করেছে দ্বিতীয় ব্যক্তি সে বিশেষণের সমর্থেই তার নামও উল্লেখ করেছে। আর এ কারণেই তার এই বাক্য অপবাদরূপে পরিগণিত হবে। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে তার জন্মসূত্রকে অস্বীকার করে বলে, ‘তুমি তোমার পিতার ঔরসজাত নও’ তাহলে তা কাযাফ হবে এবং অপবাদদাতাকে কাযাফ-এর হদ্দ লাগানো হবে। আর এটা তখন হবে যখন অপবাদ আরোপকৃত ব্যক্তির মা হবে স্বাধীন মুসলিম রমণী। কেননা, এই কাযাফ তথা যিনার অপবাদ মূলত তার মাকে লাগানো হয়েছে। আর বংশ সূত্র ব্যভিচারী সন্তান ব্যতীত অন্য কারো জন্মসূত্র ছিন্ন করা যায়। না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে রাগান্বিত হয়ে বলে, তুমি তোমার পিতার ঔরসজাত সন্তান নও কিংবা বলে তুমি অমুকের সন্তান না, তাহলে তা কাযাফ হবে আর যদি ক্রোধান্বিত হয়ে না বলে তা হলে কাযাফ হবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে তার পিতামহের দিকে সম্বন্ধ করে বলে, তুমি তার সন্তান নও তাহলে তা অপবাদ হবে না। এবং এর কারণে তার উপর হাদ্দে কাযাফ আরোপিত হবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড, আলমগীরী ও বাহরুর রাইক)
যদি কোন পুরুষ কোন সচ্চরিত্রবান পুরুষকে কিংবা কোন সতী-সাধবী নারীকে স্পষ্ট যিনার শব্দ দ্বারা অপবাদ দেয়। যেমন বলে, তুমি যিনা করেছ। অথবা বলে হে যিনাকারিণী, তাহলে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে বলে, হে যিনার সন্তান। অথবা বলে হে যিনার পুত্র! অথচ যাকে বলা হলো, তার মা হলো সতী-সাধবী নারী তা হলেও অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে বলে তার চাচা, মামা, অথবা সৎপিতার পুত্র বলে আখ্যায়িত করে তাহলে তা কাযাফ হবে না। (হিদায়া, ২য় খণ্ড; আলমগীরী, ২য় খণ্ড ও শামী, ৪র্থ খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে বলে, তুমি তোমার মা-এর ঘরের না অথবা বলে তোমার মা
বাপের ঘরের না তাহলে তা কাযাফ হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড, দুররুল মুখতার) যদি কেউ কাউকে বলে, তুমি যিনা করেছ এবং অমুক তোমার সাথে ছিল। তাহলে তা তাদের উভয়ের জন্যই কাযাফ হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি কেউ কাউকে বলে হে ব্যভিচারিণীর পুত্র এবং এই পুরুষ ছিল তোর মায়ের সাথে তা হলে তা ঐ পুরুষের জন্যে কাযাফ হবে।
যদি কেউ কাউকে বলে নিশ্চয় তুমি ছিলে সে ব্যভিচারিণী রমণীর সাথে তাহলে কাযাফ হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড) যদি কেউ কোন আরবীকে অথবা কোন বাঈযীকে অবাঙ্গালী অনারবী বলে সম্বোধন করে তা হলে তা কাযাফ হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যে লোক পূর্ব থেকেই যিনা ব্যভিচারে অভ্যস্ত এমন লোককে যিনার অপবাদ দিলে তা কাযাফ হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)