সাধারণত মাদক দ্রব্য তিন প্রকার: ১. খামর )الخمر(-এর আভিধানিক অর্থ আবৃত করা, ঢেকে দেওয়া ইত্যাদি। শরী’য়তের পরিভাষায়:
النبي من ماء العنب اذا اشتد و غلا وقدف بالزيد
আঙ্গুরের কাঁচা রস আগুনে জ্বাল দিয়ে ফুটানোর পর তাতে ফেনা সৃষ্টি হলে তাকে খামর বলে।
খামর অল্প হোক আর বেশি পান করা হারাম। খামর পানকারী ব্যক্তিকে দণ্ড প্রদান করা হবে। এক ফোঁটা পান করলেও এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। খামর নাপাক। এর বেচাকেনা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয অর্থাৎ হারাম।
২. এমন মাদ্রক দ্রব্য যা প্রকৃত খামর (মদ) নয়। তবে খাম্ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এগুলো আবার তিন প্রকার:
(ক) তিলা (১): আঙ্গুরের রস পাকানোর পর যদি দুই তৃতীয়াংশের মত শুকিয়ে যায়, তবে একে তিলা (1) বলে।
)খ) নাকীউত তামার )تقيع التحر( বা সাকার )الكر( শুকনা খেজুরের শরাব পানিতে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়।
)গ) নাকীউয় যাবীব )نقيع الذبيب(: কিসমিস কয়েকদিন পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর তাতে ভাপা সৃষ্টি হয়, তখন একে নাকীউয যাবীব বলে।
উপরোক্ত শরাব সমূহও কম বেশি সবই হারাম আর তা নাপাকও বটে। তবে কেউ তা পান করলে মাতাল না হওয়া পর্যন্ত তার উপর দণ্ডাদেশ জারী করা হবে না। এ জাতীয় শরাব বেচাকেনা করাও জায়িয নেই।
(৩) উপরোক্ত চার প্রকারের মদ ও মাদক দ্রব্য ছাড়া আরো কিছু মাদক দ্রব্য রয়েছে যা স্বল্প পরিমাণে পান করা হারাম নয়। কিন্তু নেশা সৃষ্টি হয় এ পরিমাণ পান করা হারাম। যেমন নাবীযুত তামার )نبيذ التمر( খেজুর ভিজানো পানি বা ‘নাবীযুয যাবীব )نبيذ الزبيب( কিসমিস ভিজানো পানি। যা সমান্য জ্বাল দেওয়া হয়েছে অথবা আঙ্গুরের রস জ্বাল দেওয়ার পর যার দুই-তৃতীয়াংশ ও অন্যান্য শস্যদানা ভিজিয়ে তৈরি করা নাবীয়। (তাকমিলা: মাওলানা তকী উসমানী, ৩য় খণ্ড) হিদায়া গ্রন্থ প্রণেতা বলেন, তৃতীয় প্রকারের দ্রব্যসমূহ মদরূপে সেবন করলে
হারাম হবে। এভাবে স্বল্প পরিমাণ সেবন করলে হারাম হবে। (হিদায়া, ২য় খণ্ড) কার্যকারিতা ও প্রতিক্রিয়া অনুসারে অধুনা বিশ্বে প্রচলিত মাদক দ্রব্যগুলোকে
কয়েক শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১. চেতনানাশক বেদনা উপশমকারী মাদক দ্রব্য।
২. মনোদ্দীপক বা উত্তেজক মাদক দ্রব্য। ৩. অবসাদ সৃষ্টিকারী মাদক দ্রব্য।
৪. স্নায়ুবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী মাদক দ্রব্য।
৫. বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক দ্রব্য।
৬. নাসিকা রন্ধ্রে গ্রহণযোগ্য মাদক দ্রব্য।
এগুলো প্রত্যেকটির আবার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে:
১. চেতনানাশক বেদনা উপশমকারী মাদক পর্যায়ভুক্ত রয়েছে-আফিম, মরফিন, হিরোইন এবং ফেন্সিডিল ইত্যাদি।
২. মনোউদ্দীপক মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে-কোকেন, এম ফেটামিন্স ও কোকেন ইত্যাদি।
৩. অবসাদ সৃষ্টিকারী মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- বারবিচ্যুরেটস ও মেথাকোয়ালোন ইত্যাদি।
৪. স্নায়ুবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে-জায়া জিপাম, নাইট্রাজিপাম ও ক্লোর ডায়াজিপোক্সাইড ইত্যাদি।
৫. বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক দ্রব্য হচ্ছে-ক্যানাবিস গাজা, হাশিশ, মারিজুয়ানা, ভাং ও এল, এস, ডি।
৬. নাসিকারন্ধ্রে গ্রহণযোগ্য মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- এরোসোল্স, লাইটার ফ্লুইড, বার্ণিল রিমোভার, নেলপালিশ রিমোভার, পেইন্ট থিনার, স্পট রিমোভার, ক্লিনিং সল্যুশন্স, গুল ইত্যাদি। এগুলো ইনহেলেন্টরূপে ব্যবহৃত হয়।
এসব নেশাকর মাদক দ্রব্য ড্রাগ হিসেবেই বর্তমানে সেবন করা হয় তাই এগুলো সবই হারাম। কেননা এগুলো সেবন করলে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হওয়া নিশ্চিত। এ জন্য হানাফী মাযহাবের জনৈক বিজ্ঞ ফকীহ বলেছেন:
ان من قال بحل الحشيش زنديق مبتدع
“যে ব্যক্তি বলবে, হাশীশ হালাল সে ধর্মদ্রোহী ও বিদ’আতী”। আল্লামা ইবন তাইমিয়া (র) বলেন, হাশীশ সেবন করা হারাম। অধিকন্তু এসব নেশাকর দ্রব্য সেবন করা প্রকারান্তরে নিজেকে হত্যা করার শামিল। নিজেকে নিজে হত্যা বা ধ্বংস করা প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে:
ولا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
এবং তোমরা নিজের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে না। (সূরা বাকারা: ১৯৫) (আল ফিক্ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ, ৫ম খণ্ড)
উল্লেখ্য যে, শারীরিক বা মানসিক রোগীকে অপরিহার্য ঔষধ হিসেবে বিজ্ঞ চিকিৎসক এই জাতীয় কোন দ্রব্য সেবনের প্রামর্শ দিলে তা সেবন করা বৈধ হবে।