মদ ও মাদক দ্রব্য সেবনের মধ্যে বহু অপকারিতা নিহিত আছে।

১. মদ্যপায়ী ব্যক্তি যখন মদপান করে তখন তার থেকে ঈমানের নূর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেনঃ

أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا يزنى حين يزني وهو مؤمن ولا يشرب الخمر حين يشربها وهو مؤمن ولا يسرق السارق حين

يسرق وهو مؤمن

নবী (সা) বলেন, ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময় মদপান করার সময় ঈমানদার অবস্থায় থাকে না। এমনিভাবে চোর চুরি করার সময় ঈমানদার অবস্থায় থাকে না। (বুখারী) ২. মদপানকারী ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা’আলা লা’নত বর্ষণ করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন:

لعن الله الخمر وشاربها وساقيها وبائعها ومبتعها وعاصرها

ومعتصرها وحاملها والمحمولة اليه

আল্লাহ্ তা’আলা লা’নত করেন ১. মদের উপর ২. মদ্যপায়ীর উপর ৩. মদ পরিবেশন কারীর উপর ৪. ক্রয়কারীর উপর ৫. বিক্রয়কারীর উপর ৬. প্রস্তুতকারীর উপর ৭. যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তার উপর ৮. বহনকারীর উপর এবং ৯. যার জন্য বহন করে আনা হয় তার উপর। (আবু দাউদ)

৩. মদ্যপানের কারণে দুঃশ্চিন্তা, রিযকের সংকীর্ণতা চেহারা বিকৃত এবং ভূমিকম্প

ও ভূমি ধসে যাওয়া ইত্যাদি সংঘটিত হয়ে থাকে। হাদীসে এর প্রতি ইংগিত বিদ্যমান রয়েছে।

ليكونن في هذه الامة حسف وقذف ومسخ وذلك اذا شربوا الخمور

واتخذوا القينات وضربوا معارف

এ উম্মত যখন মদপান করবে, গায়িকাদের দ্বারা গান করাবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে তখন তাদের মধ্যে ভূমিকম্প, প্রস্তুর বৃষ্টি এবং আকৃতি বিকৃত হওয়া সংঘটিত হবে। (কানযুল উম্মাল, ৫ম খণ্ড)

৪. মদ পানের কারণে মদ্যপায়ী ব্যক্তির সর্বপ্রকার গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা। থাকে। কেননা এ হচ্ছে সমস্ত গুনাহের উৎস। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন।

إجتنبوا الخمر فانها أم الخبائث

তোমরা সর্বপ্রকার মাদক দ্রব্য পরিহার করবে। কেননা, তা হচ্ছে সমস্ত পাপের উৎস। (কানযুল উম্মাল, ৫ম খণ্ড)

৫. মদ্যপায়ী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন মহিলাদের জননেন্দ্রিয় থেকে নির্গত পুঁতিগন্ধময় পুঁজ পান করানো হবে।

৬. মূর্তি ও প্রতিমা পূজারীর মত মদখোর ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করা হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন:

شارب الخمر كعابد وثن وشارب الخمر كعابد اللات والعزى

মদখোর ব্যক্তি প্রতিমা পূজারীর মত এবং মদখোর ব্যক্তি লাত ও উয্যা পূজারীর মত (কানযুল উম্মাল, ৫ম খণ্ড) এই তুলনা হারাম হওয়ার দিক থেকে হতে পারে। এমনিভাবে শাস্তির দিক থেকেও হতে পারে। ৭. চরম পিপাসিত অবস্থায় মদখোর ব্যক্তি ময়দানে হাশরে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন।

من شرب الخمر اتى عطشان يوم القيامة

মদপানকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন পিপাসার্ত অবস্থায় হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে। (কানযুল উম্মাল, ৫ম খণ্ড)

৮. মদখোর ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও তার নসীব হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন:

ثلثة قد حرم الله عليهم الجنة من من الخمر والعاق والديوث الذي

يقر في أهله الخبث. তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। ১. মদাসক্ত ব্যক্তি।

২. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান ৩. আর দায়ূস-যে তার পরিবারে যিনা জাতীয় পাপকর্ম জারী রাখে। (মিশকাত)

৯. মদপানকারী ব্যক্তি লাঞ্ছনা ও হেয়তার উপযুক্ত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন:

لا تسلموا على شربة الخمر

তোমরা মদখোর ব্যক্তিকে সালাম করবে না।

১০. মদ্যপানের ফলে মানুষ যত পাগল হয় এবং পেটের রোগে আক্রান্ত হয় ততটা আর কিছুতে হয় না।

১১. নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি মাতাল হয়ে আপনজনকেও অনেক সময় হত্যা করে বসে।

১২. মদ্যপানের কারণে যে সব রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয় তা বংশ পরম্পরায় চলতে

পারে। (আল ফিকহ্ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ, ৫ম খণ্ড)।

ফ্রান্সের জনৈক বিশিষ্ট পণ্ডিত হেনরী তাঁর গ্রন্থ “খাওয়াতির মাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছেন, “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য এই মদ ছিল অব্যর্থ তালোয়ার।” আমরা আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামী শরী’য়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে-মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়নি। ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলছে। এরা যদি আমাদের এ উপঢৌকন গ্রহণ করে নিত; যে ভাবেই তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠি গ্রহণ করে নিয়েছে তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে যেত। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত মদের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গেছে যে, তারা তাদের মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।

জনৈক বৃটিশ আইন বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, “ইসলামী শরী’য়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বৈশিষ্ট্য যে এতে মদপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে; তখন থেকেই তাদের মধ্যে উন্মাদনা সংক্রমিত হতে থাকে। আর ইউরোপের লোকেরা যখনই এই বস্তুকে চুমুক দিতে শুরু করেছে কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্যও এর কারণে কঠিন শাস্তি বিধান করা অপরিহার্য।” (মা’আরিফুল কুরআন (সংক্ষিপ্ত)