একই ব্যক্তির হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ উভয় প্রকারের হদ্দযোগ্য অপরাধ প্রামাণিত হলে, হানাফী ফকীহগণের মতে, হক্কুল্লাহ অগ্রাধিকার পাবে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে অগ্রাধিকার পাবে হাক্কুল ইবাদ। (শরহে বিকায়াহ, ২য় খণ্ড)

একই অপরাধির মধ্যে যদি একাধিক ধরনের অপরাধ পাওয়া যায়, যেমন-সে অন্যের প্রতি যিনার অপবাদ আরোপ করেছে অথবা মদ্যপান করেছে, অথবা চুরি করেছে, অথবা ব্যভিচার করেছে, তাহলে তার উপর প্রত্যেকটি অপরাধই হদ্দ কার্যকর করা হবে। তবে সকল অপরাধের হদ্দ একসাথে কার্যকর করা যাবে না। বরং তা পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে কাযাফের হদ্দ কার্যকর করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য হন্দের ক্ষেত্রে বিচারক যে কোনটিকেই অগ্রাধিকার দিতে পারেন। কিন্তু মদ্যপানের হদ্দ সর্বশেষে কার্যকর করবে। (দুররুল মুখতার, ১ম খণ্ড)

আর যদি হদ্দযোগ্য অপরাধের সাথে কাউকে আহত করার অপরাধও প্রমাণিত হয় তাহলে সেক্ষেত্রে প্রথমে আহত করার কিসাস গ্রহণ করা হবে। তারপর অন্যান্য অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে হদ্দ কার্যকর করা হবে। অর্থাৎ যে অপরাধ সবচেয়ে গুরুতর সেই অপরাধের শাস্তি প্রাধান্য পাবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)

কেউ যদি হদ্দযোগ্য একই অপরাধ একাধিকবার করে তাহলে তার উপরই হদ্দ একবার কার্যকর হবে। যেমন- কোন ব্যক্তির একাধিক চুরি করা প্রমাণিত হলো অথবা একাধিক বার যিনা করা বা মদ্য পান করা প্রমাণিত হলো তবে তার উপর হদ্দ একবার কার্যকর হবে। আর যদি একবার হদ্দ কার্যকর করার পর পুনঃ ঐ অপরাধ করে তাহলে তাতে পুনরায় হদ্দ লাগানো হবে।

কাযাফ-এর শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য

হানাফী ইমামগণ এর ব্যাপারে একমত যে, যিনার অপবাদদাতার উপর হদ্দে কাযাফ কার্যকর করার পর সর্বদার জন্য অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: وَالَّذِينَ يَرْمُونَ المُحصنت ثم لم يأتوا باربعة شهدا، فَاجْلِدُوهُمْ

نين جلدة ولا تقبلوا لهم شهادة ابدا وأولئِكَ هُمُ الْفَسَقُوْنَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلِحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ যারা সতী-সাথী রমনীদের উপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করো না।

(সুরা নূর: ৪-৫) ইমাম আযম আবু হানীফা (র), ইমাম আবু ইউসুফ (র), ইমাম মুহাম্মদ (র), ইমাম যুফার (র), সুফইয়ান সাওরী (র), হাসান ইবন সালিহ্ (র), কাযী শুরাইহ্ (র), সাঈদ ইবন মুসায়্যিব (র), সাঈদ ইবন জুবাইর (র), হাসান বাস্ত্রী (র), ইব্রাহীম নাখঈ (র), মাকতুল (র), আবদুর রহমান ইবন যায়িদ (র), প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় ইমাম ও ফকীহগণের মতে, অপবাদদাতা শত তাওবা করলে এবং সংশোধিত হলেও তার সাক্ষ্য দানের গ্রহণযোগ্যতা আর পুনর্বহাল হবে না। অবশ্য তাওবা করার দ্বারা ফিসকের হুকুম তার থেকে রহিত হয়ে যাবে।