শরয়ী আদালত ছাড়া অন্য কেউ হদ্দ কার্যকর করার অধিকার রাখে না। কাযাফ-এর হদ্দও কার্যকর করার সময় বিচারক কিংবা তার প্রতিনিধির উপস্থিতি আবশ্যক। বিচারক তার প্রতিনিধির অবর্তমানে কাযাফ-এর হদ্দ কার্যকর করা যাবে না। (কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ, ৫ম খণ্ড)
যিনার অপবাদ প্রমাণের জন্য ন্যায়পরায়ণ চারজন পুরুষ সাক্ষী হওয়া আবশ্যক তাই অপবাদ দাতাকে অবশ্যই চারজন ন্যায়পরায়ণ পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি কোন অপবাদ দাতা, চারজন ফাসিক সাক্ষী হাযির করে, তাহলে তাদের সাক্ষ্য শরয়ী আদালতে গৃহীত হবে না। এবং এর দ্বরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের উপর যিনার অভিযোগ প্রমাণিত হবে না আর তাদের উপর যিনার অভিযোগ প্রমাণিত হবে না। তাদের উপর যিনার হদ্দও সাব্যস্ত হবে না। অনুরূপভাবে এই ফাসিক সাক্ষীগণ এবং অপবাদদাতার উপরও কাযাফ এর হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। এতে অপবাদদাতা কাযাফ-এর হদ্দ থেকে নিস্তার লাভ করবে। (কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আ)
যদি কোন লোক কারও উপর একই বিষয়ে বহুবার অপবাদ আরোপ করে তবে তার উপর একবার হদ্দ কার্যকর হবে। চাই সে অপবাদ একই মজলিসে দেওয়া হোক কিংবা একাধিক মজলিসে একই শব্দ দ্বারা দেওয়া হোক কিংবা একাধিক শব্দ দ্বারা। কিন্তু এই অপবাদের হদ্দ কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর যদি সে পুনরায় অপবাদ আরোপ, করে তাহলে তার উপর আবার হদ্দ কার্যকর হবে। যদি কোন লোক একদল মানুষকে যিনার অপবাদ দেয়, চাই সে এক মজলিসে দিক কিংবা একাধিক মজলিসে, এক শব্দ দ্বারা দিক কিংবা একাধিক শব্দ দ্বারা, ভিন্ন ভিন্নভাবে দিক কিংবা সমষ্টিগতভাবে, তবে তার উপর একটি হদ্দ কার্যকর হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
আশ্রয়প্রাপ্ত কোন অমুসলিম মুসলিম রাষ্ট্রের কোন মুসলিমের প্রতি যদি যিনার অপবাদ দেয়, তাহলে তার উপরও কাযাফ-এর হদ্দ কার্যকর হবে। এবং তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। (কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ, ৫ম খণ্ড)
অনুরূপ কোন ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান যদি কোন মুসলমানকে যিনার অপবাদ দেয় তাহলে কাযাফ-এর হদ্দ স্বরূপ আশিটি বেত্রাঘাত লাগান হবে। (কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ, ৫ম খণ্ড)
হানাফী ইমামগণের মতে অপবাদদাতা অপবাদ প্রদানের দ্বারা এমন অপরাধ করে যার হদ্দ অবধারিত ও অবশ্যম্ভাবী। তাই তার উপর হদ্দ অবশ্যই কার্যকর করা হবে। ক্ষমা করা হবে না। এক্ষেত্রে ক্ষমা করার ইখতিয়ারও কারোর নেই এমনকি অপরাধ আরোপকৃত ব্যক্তিরও নয়।
আদালতের ভিতর বিচারকের সামনে যদি কেউ কাউকে যিনার অপবাদ দেয়, আর অপবাদ আরোপিত ব্যক্তি যদি সে সময় সেখানে উপস্থি না থাকে, তাহলে বিচারকের দায়িত্ব হলো অপবাদ আরোপিত ব্যক্তিকে তা অবগত করানো, বিচারকের অবগতি পেয়ে যদি অপবাদ আরোপিত ব্যক্তি আদালতে এসে হাযির হয়, তাহলে বিচারক এই মামলা গ্রহণ করবেন এবং যথারীতি মোকদ্দমা চলতে থাকবে, অপবাদদাতা যদি নিজ দাবির পক্ষে যথোপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হয় তা হলে সে অপবাদদাতারূপে সাব্যস্ত হবে এবং তার উপর কাযাফ-এর হদ্দ কার্যকর হবে। (কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবা’আহ, ৫ম খণ্ড)
কোন ব্যক্তি তার সন্তানকে একাবার স্বীকার করার পর পরবর্তী সময়ে অস্বীকার করলে তার উপর লি’আন আসবে। কেননা, স্বীকার করার দ্বারা সন্তানের নাসাব তার সাথে সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, পরবর্তী অস্বীকৃতির ফলে স্ত্রীর জন্য তা যিনার অপবাদ আরোপ করা হলো। আর এই অপবাদের কারণে তার উপর লি’আন আসবে। আর কোন ব্যক্তি যদি সন্তানকে অস্বীকার করার পর আবার স্বীকার করে, তাহলে তার উপর অপবাদের হদ্দ আসবে। কেননা, এতে সে তার স্ত্রীকে পূর্বে মিথ্যা যিনার অপবাদ দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কাজেই তার উপর অপবাদের হদ্দ কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, আগে স্বীকার করে পরে অস্বীকার করুক কিংবা আগে অস্বীকার করুক কিংবা আগে অস্বীকার করে পরে স্বীকার করুক সন্তানের নসাব সর্ব অবস্থায় ঐ পিতার সাথেই সাব্যস্ত হবে।
গর্ভবতী স্ত্রীকে স্বামী যদি একথা বলে যে, এই গর্ভ সঞ্চার আমার থেকে হয়নি। কেননা যেই ঋতুস্রাবের এই গর্ভ সঞ্চয় হয়েছে এই ঋতুর পরে আমি তার সাথে সহবাস করিনি, তাহলে ইমামগণের সর্বসম্মতিক্রমে এই গর্ভ সঞ্চার বৈধ গর্ভ হিসেবে গণ্য হবে তবে এই স্বামী স্ত্রীকে লি’আন করতে হবে। এ হচ্ছে বিশেষ ও নির্দিষ্ট গর্ভ অস্বীকৃতির বিধান।
কাযাফ-এর হদ্দ প্রয়োগের ব্যাপারে হানাফী ইমামগণের অভিমত হচ্ছে,
অপবাদকারীকে যিনাকারীর তুলনায় হালকাভাবে বেত্রাঘাত করতে হবে। অর্থাৎ ৮০ ঘা বেতই মারা হবে। তবে যিনাকারীকে যেমন কঠোরভাবে মারা হয়, তাকে ঠিক ততটা কঠোর ভাবে মারা হবে না। আর অপবাদদাতার সর্বাঙ্গে ছাড়িয়ে দিতে হবে এই আশিটি বেত্রাঘাত। শরীরের এক স্থানে সব বেত মারা যাবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
অপবাদদাতার উপর কাযাফ-এর হদ্দ প্রয়োগ করার সময় তার গায়ের সাধারণ কাপড় খুলে ফেলা যাবে না। কাপড় পরিহিত অবস্থায় তার উপর হদ্দ প্রয়োগ করা হবে। তবে তুলা বা লোম ইত্যাদিতে পূর্ণ জ্যাকেট জাতীয় পোশাক শরীরে থাকলে তা খুলে নিতে হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)