কোন দল বা ব্যক্তি যদি লুটতরাজ ও ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হয় এবং কারো অর্থ সম্পদ হরণ কিংবা কারো প্রাণ সংহারের পূর্বেই ধরা পড়ে যায়, তাহলে বিচারক তাদেরকে কয়েদ করবেন, যতক্ষণ তারা তাওবা করে ও সংশোধিত হয়ে যায়। তাওবা করে সংশোধিত হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পর তারা খালাস পাবে অন্যথায় পাবে না। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

ডাকাতরা যদি কাউকে হত্যা করে কিন্তু কারো অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন না করে, তা হলে বিচারক তাদেরকে হত্যাদণ্ডে দণ্ডিত করবেন। এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ যদি ডাকাতদেরকে ক্ষমাও করে দেয়, তবুও আদালতে তাদেরকে ক্ষমা করার ইখতিয়ার থাকবে না। বরং ডাকাতদের উপর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।

ডাকাতরা যদি ডাকাতির সময় হত্যা ও লুণ্টন উভয়টাই করে থাকে তাহলে, বিচারক তাদেরকে ডান হাত ও বাম পা কাটার পর হত্যা করে শূলে চড়াবেন অথবা ইচ্ছে করলে হাত পা কাটা বাতিরেকে হত্যা করবেন। কিংবা ইচ্ছে করলে শূদে চড়াতে পারবেন। তবে শূলে চড়ানোর ইচ্ছে করলে তাদেরকে চড়াতে পারবেন বর্শা মেরে তাদের পেট বিদীর্ণ করে দিতে হবে, যাতে করে মৃত্যু ঘটে। ইমাম তাহাভী (র)-এর মতে, জীবিতাবস্থায় তাদেরকে শলিবিদ্ধ করা যাতে না। বরং আগে হত্যা করতে হবে এবং পরে শলিতে চড়াতে হবে। কিন্তু প্রথনোও মতই সর্বাধিক সঠিক। ইমাম কারখী (র) বলেন, সঠিক কথা হলো, শূলে। তিন দিন পর্যন্ত রাখার পর, তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্যে পথ খুলে দিতে হবে। যাতে তারা ওদেরকে শূল থেকে নামিয়ে কাফন দাফনের ব্যবস্থা করতে পারে তাদেরকে জীবিতাবস্থায় শ

(আলমগীরী ২য় খণ্ড) লুটতরাজ এবং ডাকাতির শান্তি সম্পর্কে কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশম করেন:

إِنَّمَا جَزْءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلِهِمْ مِّنْ خَلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الأرض .

যে সকল লোক আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভূ-পৃষ্ঠে অরাজকতা সৃষ্টি করে, এটাই তাদের শাস্তি যে তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথব শূলিবিদ্ধ করা হবে, কিংবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে, অথবা দেশ থেকে তাদেরকে নির্বাসিত করা হবে। (সূরা মায়িদা: ৩৩)

কিন্তু অন্য কোন ইসলামী দেশে নির্বাসিত করার পরও যেহেতু এদের দ্বার সেখানে লুটতরাজ ও অরাজকতা সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা থাকে, সেহেতু ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) এবং অন্য একদল ইমামের মতে নির্বাসনের পরিবর্তে কারাগারে। নিক্ষেপ বিধেয়। (আইনুল হিদায়া, ২য় খণ্ড)

ডাকাতির অপরাধে যদি ডাকাতের হস্তপদ কর্তন করা হয় কিংবা তাকে হত্যা কর হয়, তাহলে তার উপর লুণ্ঠিত মাল-সম্পদের জন্যে কোন জরিমানা বর্তাবে না। অনুরূপভাবে, যারা ডাকাতের হাতে আহত বা নিহত হয়েছে তাদেরও কোন জরিমান তাকে দিতে হবে না। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

ডাকাত দলের যে কোন এক সদস্যের পক্ষ থেকেও যদি হত্যা কর্ম সংঘটিত হয়, তবুও তাদের দলের সকল সদস্যের উপরই সেই হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্ব বর্তাবে। সেই একজনের হত্যার অপরাধের শাস্তি স্বরূপ এদের দলের সবাইকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড) ডাকাত যদি কাউকে হত্যা না করে থাকে এবং কোন ব্যক্তির অর্থ-সম্পদও যদি তার দ্বারা লুণ্ঠিত না হয়ে থাকে, কিন্তু তার দ্বারা লোক জন যদি আহত হয়ে থাকে, তাহলে যে আঘাত কিসাস-এর আওতায় পড়বে তার শাস্তি স্বরূপ কিসাস প্রয়োগ এবং যে আঘাত ইরশ (ক্ষতিপূরণ)-এর আওতায় পড়ে তার শাস্তি স্বরূপ এই অধিকার আহত ব্যক্তির অভিবাবকদেরও থাকবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড ও হিদায়া, ২য় খণ্ড)

অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ‘ইরশ’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করবে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। ডাকাতরা যদি মাল-সম্পদ লুণ্ঠন করে এবং মানুষকে আহতও করে, তাহলে তাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করা হবে। এ অবস্থায় আহত করার জরিমানা তাদের উপর থেকে রহিত হয়ে যাবে। চাই তারা ইচ্ছে করে আহত করুক কিংবা অনিচ্ছায়।

তাওবা করার পর ডাকাতকে যদি পাকড়াও করা হয় এবং পূর্বে সে যদি কাউকে হত্যা করে থাকে তাহলে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ ইচ্ছা করলে তাকে আদালতে সোপর্দ করে রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের হুকুম বহাল রাখতে পারবে। অথবা ক্ষমাও করতে পারে। এবং ঐ ডাকাতের হাতে যেসব অর্থ-সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে চাই ঐসব স্বেচ্ছায় নষ্ট করুক কিংবা তা অনিচ্ছায় সর্বস্থায় এসবের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড ও হিদায় ২য় খণ্ড)

তাওবা করার পূর্বেই যদি ডাকাতরা ধৃত হয় এবং তারা স্বেচ্ছায় যদি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে কিংবা কাউকে আহত করে থাকে এবং তাদের লুণ্ঠিত অর্থ-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, যদি সেই লুণ্ঠিত অর্থ-সম্পদ চুরির ‘নিসাব’ এক দীনার বা দশ দিরহাম কিংবা এতদোভয়ের যে কোন একটির সমপরিমাণ মূল্য পরিমাণ না হয়ে থাকে, তাহলে হত্যা ও হতাহতের বিষয়টি আহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণের উপর ন্যস্ত হবে। ইচ্ছা করলে তারা আদালতের মাধ্যমে প্রতিশোধও নিতে পারবে এবং ইচ্ছা

করলে ক্ষমাও করতে পারবে।

অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন ব্যতীত ডাকাত যদি আর কোন কিছুই না করে থাকে এবং ধৃত হওয়ার পূর্বেই যদি সে তাওবা করে সৎ-পথে ফিরে এসে থাকে এই অবস্থায় তাকে শুধু লুণ্ঠিত মাল ফিরিয়ে দিবে অথবা নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

এক লোক ডাকাত ছিল এবং ডাকাতি করে প্রচুর ধন-সম্পদ অর্জন করেছে। তারপর তাওবা করে সমাজে বহুদিন ধরে সৎজীবন যাপন করছে। এমতাবস্থায় বিচারক তার উপর কোন দণ্ড কার্যকর করতে পরবেন না। (আলমগীরী ২য় খণ্ডডাকাত দলে যদি কোন বালক অথবা পাগল কিংবা লুণ্ঠিত ব্যক্তির কোন নিকটতম আত্মীয় )ذو رحم محرم( থাকে তাহলে অবশিষ্ট সকলের ‘হদ্দ’ রহিত হয়ে যাবে। ডাকাত দলে যদি কোন বোবা ব্যক্তি থাকে তাহলে দলের সবার ‘হন্দ’ রহিত হয়ে যাবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

ডাকাত দলে যদি পুরুষের সাথে মহিলাও থাকে অর্থাৎ নর-নারী সম্মিলিতভাবে ডাকাতি করে তা হলে এদের থেকেও ডাকাতির ‘হদ্দ’ রহিত হয়ে যাবে। ডাকাত দলে যদি মহিলা থাকে, আর সেই মহিলা কর্তৃক লুণ্ঠন ও নিধন কর্ম সংঘটিত হয়, তাহলে সে মহিলাকে হত্যা করা হবে না। বরং পুরুষদের হত্যা করা হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

দশজন মহিলার একটি দল ডাকাতি করেছে। তারা হত্যাও করেছে এবং লুণ্ঠনও করেছে। তহলে এদের প্রত্যেকের উপরই মৃত্যুদণ্ড সাব্যস্ত হবে এবং লুণ্ঠিত মালের ক্ষতিপূরণও তাদের আদায় করতে হবে। এই উভয়বিধ দণ্ডই তাদের উপর প্রযোজ্য হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)

ছিনতাইকারী (স) এবং লুটতরাজকারী (৩) এর উপর কর্তনের ‘হদ্দ’ প্রযোজ্য হবে কিনা এ নিয়ে হানাফী মাযহাবের ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ইমাম যুফার (র)-এর মতে ছিনতাই ও লুটতরাজকারীর উপর কর্তনের হদ্দ প্রয়োগ করা হবে।