মদ ও মাদক দ্রব্যের প্রতি কোন কোন মানুষের আকর্ষণ আদিকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। সুপ্রাচীন কাল থেকে বিশেষ জনগোষ্ঠির মধ্যে মাদক দ্রব্যের ব্যবহার চলে আসছে কখনো আনন্দের উপাদান হিসাবে আবার কখনো বা ধর্মীয় উৎসবে। ইসলাম-পূর্ব যুগে আরব সমাজে মদ পানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর পর্যায়ক্রমে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তান্ত্রিক ও আধ্যাত্মিক সাধনার অনুষ্ঠানরূপে প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে মাদক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে মানুষ পপির নির্যাস গ্রহণ করত। তখন মরফিন ও হিরোইন আবিষ্কৃত হয়নি। দক্ষিণ আমেরিকার কোকা গাছ থেকে কোকেন প্রস্তুত হবার বহু আগে সেখানকার আদিম অধিবাসীরা কোকাপাতা চিবিয়ে খেত। মেক্সিকোতে বসবাসরত ইণ্ডিয়ানরা (Azteo) খ্রিস্টপূর্ব ১০০ সনে Hallucinogemic psilocybin mashrooms নামক উদ্ভিদের নির্যাস গ্রহণ করতো। আধ্যাত্মিক সাধনায় ও ধর্মীয় উৎসবে একে তারা বলত Flesh of the Gods বা ঈশ্বরের দেহ মাংস। ফণীমনসা জাতীয় Peyote গাছের নির্যাসও তারা ব্যবহার করত। আমেরিকার গির্জাগুলোতে Peyote ক্যাকটাস ব্যবহারের নিয়ম ছিল। ঐ অঞ্চলের লোকেরা ক্যাকটাস শুকিয়ে খেত। এসব উদ্ভিদের ব্যবহার হতো কোন কোন ক্ষেত্রে শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিকতা লাভের জন্য আবার কখনো মানসিক বিপর্যয় ও দুঃখ কষ্ট থেকে সাময়িক পরিত্রাণের জন্য। এই বহুবিধ ব্যবহার বিভিন্ন কৃষ্টি, ধর্ম ও সামাজিক বিধি অনুসারে হতো। মোটকথা মাদক দ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা সুপ্রাচীন। তবে পূর্বে এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে। কিন্তু কালক্রমে মাদকাসক্তি সংক্রামক ব্যাধিটির মত ছাড়িয়ে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক। এক সময় তা ছিল পাশ্চাত্যের সমস্যা। এখন তা প্রাচ্য দেশগুলোকেও সমস্যা করে তুলেছে। এক কথায় বর্তমানে পৃথিবীর কোন দেশই এর মরণ-ছোবল থেকে মুক্ত নয়। এর ফলে প্রতিটি দেশ সমাজ ক্রমেই ধ্বংসের অতল গহবরে তলিয়ে যাচ্ছে। টাকা পয়সা ধন-সম্পদ আকল মেধা বিশেষ করে আজকের যুবশক্তি ক্রমেই পতনের দিকে ধেয়ে চলেছে। এ ধ্বংস থেকে সমাজ বিশেষত যুব সমাজকে রক্ষা করা আমাদের সকলের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।