যিনার সংজ্ঞা ও পরিচিতি
বালিগ ও বুদ্ধিমান এক জোড়া নারী-পুরুষের বৈবাহিক বন্ধন ব্যতিরেকে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে একজনের যৌনাঙ্গে অপরজনের যৌনাঙ্গ প্রবিষ্ট করানোকে যিনা-ব্যভিচার বলে। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) যিনার নিম্নোক্ত সংজ্ঞা দিয়েছেনঃ
“এমন কোন নারীর সাথে তার সম্মতিতে তার যৌনাঙ্গে কোন পুরুষের সঙ্গম ক্রিয়াকে যিনা বলে, যে তার স্ত্রী বা ক্রীতদাসীও নয় এবং স্ত্রী বা ক্রীতদাসী হওয়ার সন্দেহও বিদ্যমান নাই।”
আল্লামা ইমাম কাশানী (র) তাঁর সংজ্ঞায় ‘জীবিত’ শব্দ যোগ করেছেন। অর্থাৎ উভয়কে জীবিত হতে হবে। এই শেষোক্ত সংজ্ঞাধীন যিনাই হদ্দযোগ্য অপরাধের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং প্রথমোক্ত সংজ্ঞাধীন যিনা তাযীরের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যিনার অপকারিতা
যিনা-ব্যভিচার একটি ঘৃণ্য নৈতিক ও সামাজিক অপরাধ। তা যেমন বাহির চরিত্র ও মর্যাদাকে কলুষিত করে, তদ্রূপ সমাজ ও সভ্যতাকেও ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। এই অপকর্মের ফল স্বরূপ জন্মগ্রহণকারী একটি নিষ্পাপ ও নিরপরাধ মানুষকে সারা জীবনের জন্য কুপরিচয় বহন করতে হয় এবং হীনমন্যতার গ্লানি ভোগ করতে হয়।
মরণঘাতি ব্যাধি ‘এইড্স’-এর উৎপত্তিও হলো যিনা। এসব প্রকাশ্য ও অন্তর্নিহিত ধ্বংসাত্মক ক্ষতির কারণেই মহান আল্লাহ্ যিনাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইরশাদ করেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلاً
আর তোমরা যিনার নিকটবর্তী হইও না, তা নিশ্চিত অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)
মহানবী (সা) বলেন: যিনাকারী মু’মিন থাকা অবস্থায় যিনা করতে পারে না। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ যিনায় লিপ্ত অবস্থায় মু’মিন ব্যক্তি ঈমানের বৈশিষ্ট্যহারা হয়ে পড়ে। অপর হাদীসে মহানবী (সা) বলেনঃ তোমরা যিনায় লিপ্ত হইও না। (আবূ দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ)
যিনার কারণে মানব জাতির ও মানব সমাজের মূল ভিত্তিই বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই ইসলামী আইনে যিনাকে কবীরা গুনাহ্ ও হদ্দযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কুরআন মজীদে যিনার প্রতি ঘৃণা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে।
الزَّانِي لا ينكح إلا زانية أو مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَا إِلَّا زَانِ أَوْ
مشرك وحرم ذلك على المؤ منين .
যিনাকারী যিনাকারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ব্যতীত বিবাহ করবে না; যিনাকারিণী তাকে যিনাকারী বা মুশরিক ব্যতীত কেউ বিবাহ করবে না। মু’মিনদের জন্য তা নিষিদ্দ করা হয়েছে। (সূরা নূর: ৩)
বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই যিনাকে একটি ঘৃণ্য অপরাধ মনে করে। এ অপরাধ সৎচরিত্রের পরিপন্থী।) স্বয়ং যিনাকারী যিনাকারিণীর এবং যিনাকারী যিনাকারিণীকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এরা অস্থিরতায় লিপ্ত থাকে। অবৈধ যৌন সংযোগ দাম্পত্য প্রেম ও সংসার জীবনকে ধ্বংস করে। যিনা এমন এক ঘৃণ্য অপরাধ যে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবেও তা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে।
যে অবস্থায় যিনা সাব্যস্ত হয়
ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যিনার অপরাধ দুইভাবে সাব্যস্ত হয়:
১. সাক্ষীগণের সাক্ষ্য দ্বারা এবং
২. যিনাকারী অথবা যিনাকারিণীর স্বীকারোক্তি দ্বারা। চারজন বালিগ ও বুদ্ধিমান নির্ভরযোগ্য মুসলিম পুরুষ একই মজলিসে যিনা শব্দ উল্লেখপূর্বক তা সংঘটিত হতে স্বচক্ষে দেখেছে বলে সাক্ষ্য প্রদান করলে বিচারকের নিকট তা বাহ্যিকভাবে প্রমাণিত হবে। তবে হদ্দ প্রয়োগের জন্য কেবল এইরূপ সাক্ষ্য প্রদানই যথেষ্ট নয়, বরং বিষয়টি সম্পর্কে বিচারকের সার্বিকভাবে সন্দেহমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাই এভাবে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদানের পর বিচারক উক্ত বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাক্ষীগণকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন যে, যিনা কি এবং ইহা কোন অঙ্গ দ্বারা হয়েছে? যিনা কি অবস্থায় হয়েছে, কখন হয়েছে, কার সাথে হয়েছে এবং কোন স্থানে হয়েছে? উক্ত জিজ্ঞাসার উপরে সাক্ষীগণ যদি যিনার বিবরণ পেশ করে সুনির্দিষ্টভাবে বলে যে, সুরমাদানীতে যেভাবে সুরমা শলাকা প্রবিষ্ট করানো হয় অভিযুক্তদের একের যৌনাঙ্গ অপরের যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট হতে দেখেছি এবং যিনা অমুক অবস্থায় অমুক সময় অমুকের সাথে অমুক জায়গায় হয়েছে। বিচারক সাক্ষীদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে যদি নিশ্চিত থাকেন তা হলে এরূপ প্রশ্নোত্তর দ্বারা যিনা নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হবে। যিনা সাব্যস্ত হওয়ার পর বিচারক অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, সে বিবাহিত কি না? যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিটি বিবাহিত হয়, তাহলে বিচারক তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করবেন, আর বিবাহিত না হলে তাকে দুর্বরা মারার আদেশ দিবেন। আর বিচারক যদি সাক্ষীদের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে সন্দেহমুক্ত হতে না পারেন, তবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে আটকিয়ে রাখবেন।
চারজন সাক্ষী যিনার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করার পর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, যিনার অবস্থা ও তার তাৎপর্য কি? তখন তারা যদি সবাই অথবা তাদের কেউ কেউ বলে যে, আমরা যা দেখেছি এর চেয়ে অতিরিক্ত কিছুই বলব না। তাহলে এ অবস্থায় সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে তাদের সংখ্যা পূর্ণ হওয়ার কারণে এজন্য তাদের উপর কোন প্রকার হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। অনুরূপ অভিযুক্তদের উপরও হদ্দ আরোপিত হবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
অনুরূপ যিনাকারীর স্বীকারোক্তি দ্বারাও যিনা প্রমাণিত হয়। তবে উক্ত স্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাওয়া আবশ্যক:
১. উক্ত স্বীকারোক্তি আদালতের সম্মুখে হতে হবে। আদালত ব্যতীত হদ্দ প্রয়োগের ইখতিয়ার বহির্ভূত কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির নিকট করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, যদিও অপরাধী এ ব্যাপারে একে একে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান
করে।
২. উক্ত স্বীকারোক্তি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হতে হবে। সুতরাং কোন বোবা ব্যক্তি যদি লিখিতভাবেই অথবা ইঙ্গিতে এরূপ স্বীকারোক্তি প্রদান করে তাহলে এ জন্য তার উপর হন্দ প্রয়োগ করা যাবে না। কেননা হতে পারে যে, সে সন্দেহেরবশে এরূপ দাবি করে বসেছে।
৩. উক্ত স্বীকারোক্তি অপরপক্ষ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত না হওয়া। কাজেই কোন পুরুষ যিনার স্বীকারোক্তি করার পর মহিলা যদি অস্বীকার করে অণুবা কোন মহিলা যিনার স্বীকারোক্তি করার পর পুরুষ যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তা হলে এ অবস্থায় তাদের কারুর উপরই হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না।
৪. স্বীকারোক্তিকারী অথবা স্বীকারোক্তিকারিণী সুস্থ যৌনাঙ্গের অধিকারিণী হওয়া। অতএব কোন পুরুষ যিনার স্বীকারোক্তি করার পর যদি হদ্দ প্রয়োগের পূর্বে প্রকাশ পায় যে, সে লিঙ্গ কর্তিত অথবা কোন মহিলা যিনার স্বীকারোক্তি করার পর হদ্দ প্রয়োগের পূর্বে প্রকাশ পায় যে, সে ‘রাতকা’ তাহলে এ অবস্থায় তাদের উপর হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। ৫. উক্ত স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে হতে হবে। সুতরাং কোন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় এরূপ স্বীকারোক্তি প্রদান করলে অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে কারো কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলে তা ধর্তব্য বলে গণ্য হবে না।
৬. স্বীকারোক্তিকারী অথবা স্বীকারোক্তিকারিণীর বালিগ ও বুদ্ধিমান হওয়া এবং নিজে পৃথক পৃথক চার মজলিসে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করা। পৃথক পৃথক চার মজলিসে চারবার স্বীকারোক্তি না করে যদি একই মজলিসে চারবার স্বীকারোক্তি করা হয় তাহলে তা একবার স্বীকারোক্তি বলে গণ্য হবে।
এই চারবার স্বীকারোক্তি এক দিনেও হতে পারে এবং প্রতিমাসে একবার করেও হতে পারে। এভাবে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর হদ্দ প্রয়োগ করা হবে। উক্ত স্বীকারোক্তি প্রদানের নিয়ম এই যে, স্বীকারোক্তিকারী অথবা স্বীকারোক্তিকারিণী বিচারকের নিকট একবার স্বীকারোক্তি প্রদান করে তার দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে। তারপর পুনরায় তার নিকট এসে আবার স্বীকারোক্তি প্রদান করবে। এভাবে একে একে চারবার তাকে এরূপ স্বীকারোক্তি প্রদান করতে হবে। স্বীকারোক্তির সময় বিচারকের উচিত স্বীকারোক্তিকারীকে এ থেকে বারণ করা এবং এ ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তাকে তা প্রত্যাহার করে নিতে বলা।
কিন্তু বিচারকের বারণ সত্ত্বেও স্বীকারোক্তিকারী যদি একে একে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করে তখন তিনি তার অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করবেন। যদি সে সুস্থ মস্তিষ্ক ও যার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা যায় এমন হয় তাহলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, যিনা কি ও তা কিভাবে হয়েছে এবং কার সাথে যিনা হয়েছে ও কোথায় এবং কখন যিনা হয়েছে? এর জবাবে সে যদি যিনার বিবরণ পেশ করে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে বলে যে, যিনা এইভাবে অমুকের সাথে অমুক জায়গায় ও অমুক সময়ে হয়েছে, তাহলে এর দ্বারা তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় অপরাধী মুহসিন বিবাহিত হলে বিচারক তাকে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর দণ্ডাদেশ প্রদান করবেন। আর অবিবাহিত হলে এক’শ বেত্রাঘাতের আদেশ দিবেন। তবে হদ্দ প্রয়োগের পূর্বে স্বীকারোক্তিকারীকে এরূপ তালকীন করা মুস্তাহাব যে, সম্ভবত তুমি যিনা করনি বরং তুমি চুমো খেয়েছ এবং হাত দ্বারা স্পর্শ করেছ ও সন্দেহবশত সঙ্গম করেছ। এর উদ্দেশ্য হলো তার দ্বারা এমন কথা বলানো যাতে হদ্দ রহিত হয়ে যায়।
যদি চারজন সাক্ষী কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যিনার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি তা একবার স্বীকার করে এবং এই স্বীকারোক্তি বিচারকের রায়ের পূর্বে হয় তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে তার উপর হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। অনুরূপ তা বিচারকের রায় ঘোষণার পরে হলেও ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে তার উপর হন্দ প্রয়োগ করা হবে না। চারজন সাক্ষী যিনার সাক্ষ্য প্রদান করার পর যদি যিনার কথা স্বীকার করে পরবর্তীতে তা অস্বীকার করে এবং সে পূর্বে তা স্বীকার করে না থাকে তাহলে তার উপর হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। আর যদি কোন লোকের বিরুদ্ধে চারজন সাক্ষী যিনার সাক্ষ্য প্রদান করার পর বিচারক তার প্রতি দণ্ডাদেশ ঘোষণা করে এবং এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করে, তবে এ অবস্থায় তার উপর হদ্দ কার্যকর হবে। কিন্তু সে যদি স্বীকারোক্তি প্রদান না করে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়, তবে সেটাও বৈধ হবে এবং এ অবস্থায় তার উপর যিনার হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না।
সাক্ষীগণের সাক্ষী প্রদানের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি যিনার কথা স্বীকার করে এবং সাক্ষীদের সংখ্যা চারের কম হয়, তাহলে এজন্য সাক্ষীগণের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে না।
যিনার স্বীকারোক্তি প্রদানের পর যদি উক্ত ব্যক্তি হদ্দ প্রয়োগের পূর্বে অথবা হদ্দ প্রয়োগের সময় তা প্রত্যাহার করে নেয় তবে তা সঠিক হবে এবং এ অবস্থায় তাকে যিনার শাস্তি হতে অব্যাহতি দিতে হবে। আর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সবাই সমান। অর্থাৎ তাদের সকলের স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার গ্রহণযোগ্য। অনুরূপ সাক্ষ্য দ্বারা হোক কিংবা স্বীকারোক্তির মাধ্যমে হোক বিচারকের নিকট যিনা সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মাঝে কোন প্রকার পার্থক্য নেই।
যদি যিনাকারী পলায়ন করে এবং এরপর ফিরে না আসে তাহলে তাকে খোঁজাখুঁজি না করাই সংগত, যদিও পলায়নরত অবস্থায় সে উক্ত কর্মে লিপ্ত থাকে।
সাক্ষীগণের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত যিনার হদ্দ আংশিকভাবে প্রয়োগ করার পর অপরাধী পলায়ন করলে প্রহরীগণ যদি তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে আনতে সক্ষম হয় তাহলে তার উপর অবশিষ্ট হদ্দ প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু তাকে ধরে আনতে যদি কয়েক দিন সময় লেগে যায় তাহলে বাকি অংশটুকু রহিত হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মুহসিন ও গায়র মুহসিনের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য নেই।
যদি কোন অণ্ডকোষ কর্তিত অথবা লিঙ্গ কর্তিত ব্যক্তি যিনার স্বীকারোক্তি প্রদান করে অথবা সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের উপর যিনার হদ্দ প্রয়োগ করা হবে। অনুরূপ কোন অন্ধলোক যিনার কথা স্বীকার করলে তার উপরও হদ্দ প্রয়োগ করা হবে।
ইমাম মুহাম্মদ (র) বলেন, যদি কোন লোক চারবার এরূপ স্বীকারোক্তি প্রদান করে যে, সে অমুক মহিলার সাথে যিনা করেছে, কিন্তু মহিলা বলছে সে আমাকে বিবাহ করেছে, অথবা কোন মহিলা চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করে যে, সে অমুক পুরুষের সাথে যিনা করেছে, কিন্তু পুরুষ বলেছে, আমি তাকে বিবাহ করেছি, তবে এ অবস্থায় তাদের কারো উপরই হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু পুরুষকে উক্ত মহিলার মহর পরিশোধ করে দিতে হবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যিনার হদ্দ কার্যকর করার শর্ত
যিনার হদ্দ দু’প্রকার: ১. জালদ বা বেত্রদণ্ড এবং ২. রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা। উভয় প্রকার ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো যিনা। তবে শর্তের দিক থেকে উভয়টিতে পার্থক্য রয়েছে। রজমের হদ্দ ওয়াজিব হওয়ার জন্য অপরাধীর মুহসিন হওয়া শর্ত, পক্ষান্তরে জালদ বা বেত্রদণ্ড ওয়াজিব হওয়ার জন্য মুহসিন হওয়া জরুরী নয়।
যিনার ক্ষেত্রে মুহসিন হওয়ার শর্ত ৭টি: ১. যিনাকারী এবং যিনাকারিণী উভয়ে বুদ্ধিমান হওয়া, ২. উভয়ে বালিগ হওয়া, ৩. উভয়ে স্বাধীন হওয়া, ৪. উভয়ে মুসলিম হওয়া, ৫. উভয়ে সহীহ্ বিবাহের মাধ্যমে কারও সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ থাকা, ৬. স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে উপরোক্ত গুণাবলী বিদ্যমান থাকা। অর্থাৎ তাদের উভয়ে বুদ্ধিমান হওয়া, বালিগ হওয়া, স্বাধীন হওয়া ও মুসলিম হওয়া আবশ্যক। ৭. সহীহ বিবাহের মাধ্যমে উভয়ের মাঝে সঙ্গম হওয়া।
উল্লিখিত বিষয়গুলো অভিযুক্তদের উভয়ের মুহসিন হওয়ার জন্য আবশ্যক। এগুলোর কোন একটির অনুপস্থিতিতে তাদেরকে মুহসিনরূপে গণ্য করা যাবে না। এ কারণে কোন নাবালগ শিশু, পাগল, গোলাম, কাফির, ফাসিক বিবাহের মাধ্যমে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ ব্যক্তি, সহীহ বিবাহের পর সঙ্গম হয়নি এমন অথবা সঙ্গম হয়েছে, তবে সঙ্গমের সময় ইহসানের শর্ত পাওয়া যায়নি এমন ব্যক্তিকে মুহসিনরূপে গণ্য করা হবে না। তাই কোন স্বামী যদি স্বীয় বালিকা বধু অথবা উন্মাদ স্ত্রী অথবা স্বীয় বাঁদী অথবা কিতাবিয়ার সাথে সঙ্গম করে এবং সঙ্গম করার পর উক্ত বালিকা সুস্থ হয়ে যায়, বাঁদীকে মুক্ত করে দেওয়া হয় ও কাফির মহিলা মুসলমান হয়ে যায় তবে এ সমস্ত কারণ দূর হওয়ার পর আরেকবার সঙ্গম না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তি মুহসিন হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং এ অবস্থায় উক্ত স্বামী যদি কোন মহিলার সাথে যিনা করে তাহলে তার উপর রজমের হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। (বাদায়িউস্ সানায়ি)
যিনা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য সাক্ষীর সংখ্যা
যে যিনা সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয় সে যিনা প্রমাণিত হওয়ার জন্য সাক্ষীর সংখ্যা চার হওয়া আবশ্যক এবং উক্ত সাক্ষীদের সকলকেই স্বাধীন ও মুসলমান হতে হবে। সাক্ষীদের সংখ্যা চারের কম হলে এক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। এবং এ অবস্থায় তাদের সকলের উপর কাযাফের হদ্দ প্রযোজ্য হবে। অনুরূপ বিচারকের সম্মুখে চারজন লোক সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য উপস্থিত হওয়ার পর যদি তাদের থেকে একজন অথবা দুইজন অথবা তিনজন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যিনার সাক্ষ্য প্রদান করে এবং অপরজন সাক্ষ্য প্রদান হতে বিরত থাকে তবে এক্ষেত্রে সাক্ষ্যদাতাদের উপর কাযাফের হদ্দ (যিনার অপবাদ) আরোপিত হবে। একইভাবে যদি সাক্ষ্যদের তিনজন যিনার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে এবং চতুর্থজন বলে যে, আমি তাদের উভয়কেই একই লোকের নিচে দেখেছি, তাহলে যে তিনজন যিনার সাক্ষ্য প্রদান করেছে তাদের উপর কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে এবং অভিযুক্ত চতুর্থ সাক্ষীর উপর কিছু আবশ্যক হবে না। তবে চতুর্থ সাক্ষী যদি তার বক্তব্যের শুরুতে বলে যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, সে অমুকের সাথে যিনা করেছে এবং তারপর যিনার ব্যাখ্যা এই বক্তব্য পেশ করে তাহলে এক্ষেত্রে তার উপরও কাযাফের হদ্দ আরোপিত হবে।
উল্লেখ্য যে, হানাফী ফকীহগণের মতে যিনার সাক্ষ্য সঠিক হওয়ার জন্য সাক্ষীগণের মজলিস এক হওয়া আবশ্যক। সাক্ষীগণ যদি একই মজলিস হতে সাক্ষা প্রদান না করে ভিন্ন ভিন্ন মজলিস হতে প্রদান করে তাহলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না এবং এ অবস্থায় তাদের উপর কাযাফের হদ্দ প্রযোজ্য হবে। ইমাম মুহাম্মদ (র) হতে বর্ণিত আছে যে, যদি সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদানের স্থলে উপবিষ্ট অবস্থায় থাকে এবং সাক্ষ্য প্রদানের সময় একের পর এক একজন একজন করে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে জায়িয হবে এবং এ অবস্থাকে মজলিস হিসেবে গণ্য করা হবে না।
কিন্তু সাক্ষীগণ যদি ঘরের মধ্যে অবস্থান না করে ঘরের বাইরে থাকে এবং সাক্ষ্য প্রদান কালে তাদের থেকে একজন ঘরে এসে সাক্ষ্য প্রদান করে আবার বাইরে চলে যায়, তারপর একে একে অন্যান্য সবাই ঘরে প্রবেশ করে তাদের নিজ নিজ সাক্ষ্য প্রদান করে তাহলে এ অবস্থায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্যরূপে বিবেচিত হবে না।
চারজন সাক্ষী কোন পুরুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করল যে, সে এই মহিলার সাথে যিনা করেছে, পরে উক্ত চারজন সাক্ষ্য দিল যে, সে তার সাথে বসরায় যিনা করেছে, আর অপর দুইজন সাক্ষ্য দিল সে তার সাথে যিনা করেছে কৃফাতে। এ অবস্থায় উক্ত পুরুষ ও মহিলার উপর কোন হদ্দ আরোপিত হবে না এবং সাক্ষীগণের উপরও কোন হদ্দ আসবে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যদি চারজন সাক্ষী কোন পুরুষের বিরুদ্ধে যিনার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করার পর যার সাথে যিনা করা হয়েছে সেই মহিলা অথবা যিনার স্থান অথবা যিনার সময় নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়, তাহলে তাদের সাক্ষ্য বাতিল হয়ে যাবে। তবে এ জন্য সাক্ষীগণের উপর কোন প্রকার হদ্দ আসবে না। কিন্তু এই মতপর্থক্য যদি যিনাকারী অথবা যিনাকারিণীর কাপড় অথবা এর রং অথবা যার সাথে যিনা করা হয়েছে তার দৈর্ঘতা অথবা ক্ষুদ্রতা কিংবা হৃষ্ট-পুষ্টতা ইত্যাদি অমূখ্য বিষয়ে হয়ে থাকে তবে এর দ্বারা তাদের সাক্ষ্যে কোনরূপ প্রভাব পড়বে না। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)
যিনার শাস্তি ও তা কার্যকর করার পদ্ধতি
যিনার শাস্তি ২ প্রকার: ১. রজম বা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীর উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করা এবং ২. জালদ বা অপরাধীকে একশত বেত্রদণ্ডে দণ্ডিত করা। অপরাধী মুহসিন হলে তাকে রজমের শাস্তি প্রদান করবে। আর যদি সে মুহসিন না হয় তাহলে তাকে একশত ঘা বেত্র প্রদান করবে।
রজম করার সময় অপরাধীকে কোন খালি মাঠে নিয়ে যাবে। তারপর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তার উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করতে থাকবে। রজমের শাস্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণকে শাস্তির স্থলে একত্রিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা মুস্তাহাব। বিচারকের নির্দেশে রজমের লোকেরা নামাযের মত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। একদল রজম করার পর তারা পিছিয়ে আসবে। তারপর আরেক দল এগিয়ে যাবে এবং রজম করতে থাকবে। রজম করার সময় রজমকারী প্রস্তর নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার নিয়্যত করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে রজমকৃত ব্যক্তি যদি রজমকারীর এমন নিকটাত্মীয় হয় যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম তবে সে ক্ষেত্রে
এরূপ নিয়্যত করা মুস্তাহাব নয়। যখন সাক্ষীদের সাক্ষ্য দ্বারা রজম ওয়াজিব হয়, তখন সাক্ষীদের দ্বারা তার সূচনা
করা আবশ্যক, তারপর বিচারক এবং তারপর অন্যান্য লোক। সাক্ষীগণ যদি রজমের সূচনা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তা হলে অভিযুক্তের উপর হতে রজম রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু এই অস্বীকৃতির কারণে সাক্ষীদের উপর কাযাফের হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। কেননা তাদের এই অস্বীকৃতি সাক্ষ্য প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নয়। অনুরূপ সাক্ষীদের একজন বিরত থাকলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি রজম থেকে নিষ্কৃতি পাবে এবং উক্ত সাক্ষীর উপর কোন হদ্দ আসবে না। একইভাবে সাক্ষীগণ সকলে অথবা তাদের কেউ যদি মারা যায় অথবা অদৃশ্য হয়ে যায়, অথবা তাদের সাক্ষ্যদানের যোগ্যতা রহিত হয়ে যায়, তবে এর দ্বারা হদ্দ রহিত হয়ে যাবে। যদি সাক্ষীদের কেউ হস্তকর্তিত হয় অথবা সে এমন অসুস্থ হয় যে, প্রস্তর নিক্ষেপ করতে সক্ষম নয় তবে সে উপস্থিত থাকলে তার পক্ষ হতে বিচারক তার সূচনা করবেন। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি মুহসিন না হয় তাহলে সাক্ষীগণের মৃত্যু এবং তাদের অনুপস্থিতির সময়ও তার উপর হদ্দ কার্যকর হবে। এ দু’অবস্থা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় তা বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রজম ছাড়া অন্য কোন হদ্দের ক্ষেত্রে সাক্ষী ও বিচারকের দ্বারা তার সূচনা জরুরী নয়। গণ্য করা হবে না। এ অবস্থায় যদি হারাম সম্পর্কে তার জানা থাকে তাহলে তার উপর হদ্দ প্রয়োগ করা হবে নচেৎ হদ্দ প্রযোজ্য হবে না।
ইমাম ইসবীজাবী (র) বলেন, এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো এই যে, যখন অপরাধী সন্দেহের দাবি করে তার উপর প্রমাণ করে পেশ করবে তখন তার উপর হতে হদ্দ রহিত হয়ে যাবে। অবশ্য অনেক সময় শুধুমাত্র দাবি করার দ্বারাও রহিত হয়ে যায়। তরব বল প্রয়োগ এর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সেক্ষেত্রে প্রমাণ কায়িম করা ছাড়া হদ্দ রহিত হয় না।
যদি কোন মহিলাকে তিন তালাক প্রদান করার পর রাজ’আতের ইদ্দত খতম হওয়ার পরে তালাকদাতা তার সাথে সঙ্গম করে তবে সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত সঙ্গমকারীর উপর হদ্দ কার্যকর করতে হবে। (আলমগীরী ২য় খণ্ড)
যদি কোন লোক তার পিতার স্ত্রী অথবা দাদার স্ত্রীর সাথে যিনা করে, তবে তার উপর হদ্দ অবধারিত হয়ে যাবে, যদিও সে বলে, আমার ধারণা হয়েছিল যে সে আমার জন্য হালাল।
যদি কোন বালক অথবা পাগল কোন বুদ্ধি সম্পন্ন মহিলার সাথে যিনা এবং মহিলা স্বেচ্ছায় নিজেকে নিবেদন করে তা হলে সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত বালক ও পাগলের উপর কোন প্রকার হদ্দ আরোপিত হবে না। আর যদি কোন বালিকার সাথে যিনা করে তবে তাদে কারো উপরই কোন হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। এ অবস্থায় যিনাকারীর উপর মহর ওয়াজিব হবে। আর যদি বালক নিজেই যিনার স্বীকারোক্তি প্রদান করে তবে তার এ স্বীকারোক্তি দ্বারা কিছুই আবশ্যক হবে না। যদি কোন বালক কোন মহিলার সাথে যিনা করে তার কুমারিত্বের পর্দা অপসারিত করে ফেলে এবং মহিলা যিনা কর্মে অসম্মত থাকে, তবে ঐ বালক তার মহরের যিম্মাদার হবে। অনুরূপ কোন বালিকা যদি কোন বালককে নিজের দিকে আহবান করে এবং উক্ত বালক এ বলিকার কুমারিত্বের পর্দা অপসারিত করে ফেলে তাহলে বালকের উপর মহর ওয়াজিব হবে।
যদি কোন মহিলা কোন ঘুমন্ত ব্যক্তির নিকট নিজেকে সমর্পন করে তবে এর দ্বারা তাদের কারো উপর হদ্দ আবশ্যক হবে না। শাসক কর্তৃক কোন ব্যক্তির উপর বল প্রয়োগ করার পর সে যিনা করলে তার উপর যিনার হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না। অনুরূপ শাসক ব্যতীত অন্য কোন লোকের দ্বারা বল প্রয়োগের কারণে যিনা করলেও ইমাম আবু ইউসূফ (র) ও মুহাম্মদ (র)-এর মতে তার উপর যিনার হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। কোন মহিলার বল প্রয়োগ করার পর সে যিনার জন্য রাযি হলে সর্বসম্মতিক্রমে হদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না।
মোটকথা হদ্দ রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো এই যে, যখন যিনাকারীর কোন একজনের উপর হতে হদ্দ রহিত হয়ে যায়, তখন শরীক হওয়ার কারণে অন্য জনের উপরও তা রহিত হয়ে যায়। যেমন- যিনাকারীদের একজন দাবি করল যে, সে তাকে বিয়ে করেছে, কিন্তু অপরজন তা অস্বীকার করে দিল। আর যখন তা কাজের অপূর্ণতার করণে রহিত হয়। তখন এ অপূর্ণতা যদি মেয়ের দিক হতে হয় তাহলে তার উপর হতে হদ্দ রহিত হবে, পুরুষের উপর থেকে হবে না। যেমন-সঙ্গম করা যায় এমন কোন বালিকা, পাগল মহিলা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করা হয়েছে এমন কোন মহিলা অথবা ঘুমন্ত মহিলার সাথে যিনা করা দ্বারা তাদের উপর হদ্দ প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু যিনাকারীর উপর তা প্রযোজ্য হবে। আর সেই অসম্পূর্ণতা যদি পুরুষের পক্ষ হতে হয়ে থাকে তাহলে তাদের উভয়ের উপর হতে হদ্দ রহিত হয়ে যাবে। (আলমগীরী, ২য় খণ্ড)